জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হলে মার্কিন ভিসা নীতি আশীর্বাদ হবে

গত ২৪ যে নতুন করে বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্থনি ব্লিংকেন। এর মাধ্যমে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নতুন করে চিন্তার উদ্বেগ হয় বাংলাদেশে।

মনীষীরা বলেন, প্রতিটা সংকটই নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও এই সূত্র প্রযোজ্য। বছর খানেক আগে ভারত বাংলাদেশে কোরবানির গরু রপ্তানি করবে না বলে ঘোষণা দেয়।

সেই ঘোষণার পর সেবছর কোরবানির গরুর দাম আকাশ ছুঁয়েছিল। এছাড়া বাজারে গরুর মাংসের দামও বেড়ে গিয়েছিল।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণ ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দীর্ঘমেয়াদে লাভ হয়েছে দেশের খামারীদের, দেশেরও।

এরপর থেকে দেশীয় খামারিরা প্রচুর গরু উৎপাদনে মনোযোগী হয় এবং দেশীয় গরু দিয়েই মাংসের চাহিদা মিটতে থাকে।

পরিসংখ্যানে জানা গেছে, আসন্ন কোরবানির ঈদে প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ২১ লাখ গরু অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। যাতে গরুর মাংসের দামও কমে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে গত ১৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি আরোপ করার পর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে।

অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, এর পাশপাশি হুন্ডিতে অবৈধ টাকা পাঠানোর পরিমাণও কমে গেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

ধারণা করা হচ্ছে, যারা বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ টাকা উপার্জন করেছেন, যদি কোন কারণে আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলোতে তারা ভিসা না পান তাহলে টাকা পাঠিয়ে লাভ নেই। টাকাগুলোই গচ্চা যাবে।

মূলত এই কারণেই টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমে গেছে। উপরন্ত যারা টাকা পাঠিয়েছিলেন তারাও নানান শঙ্কা অনিশ্চয়তায় অর্থ ফেরত আনছেন দেশে। ফলে গত মাসেই পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকেও রেকর্ড অর্থ ঢুকেছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

এছাড়া মার্কিন নতুন ভিসা নীতির সংকট থেকে থেকে আরোকিছৃ উপকারের আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান বিগত ২০ বছর যাবৎ নানামুখী মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইরানের নেতৃবৃন্দ এই সংকটকে শক্তিকে পরিণত করেছেন। সাধারণত কোন দেশ মার্কিনী স্বার্থ উদ্ধারে কাজ না করলে শাস্তি স্বরুপ এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে।

আমেরিকার উপর নানাভাবে নির্ভরশীল দেশগুলো এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপে পড়ে মার্কিন গন্ডিতে আবার ফিরে যায়।

তবে ইরান, তুরস্ক, চীন, উত্তর কোরিয়ার মতো কিছু দেশ এই সংকটকে পুঁজি করে নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হওয়ায় তারা মার্কিন নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসেছে।

ইরান, তুরস্ক রীতিমতো বিশ্বের বহু দেশে তাদের অস্ত্র বিক্রি করছে। যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গেই আবার নতুন অস্ত্র চুক্তি করছে।

একইভাবে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা যদি এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন নির্ভরতা কমাতে পারেন তাহলে বাংলাদেশও শক্তিশালী স্বনির্ভর নতুন একটি দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

তবে এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করা। তবেই মার্কিন নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আত্মনির্ভরশীল এক জাতিতে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ।