বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ জন আলফ্রেড টিনিসউড

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ জন আলফ্রেড টিনিসউড। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষ জন আলফ্রেড ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। বর্তমানে তার বয়স ১১১ বছর ২২৮ দিন। সম্প্রতি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল ভেনেজুয়েলার ১১৪ বছর বয়সী হুয়ান ভিসেন্তে পেরেজ মোরার হাতে। তবে গত ২ এপ্রিল মারা যান পেরেজ। পেরেজের মৃত্যুর পরে, এই রেকর্ডটি জাপানের ১১২ বছর বয়সী গিসাবুরো সোনোবের কাছে যাওয়ার কথা ছিল।

তবে গিনেস বুকের দল অনুসন্ধান করে জানতে পারে গিসাবুরো সোনোবও ৩১ শে মার্চ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ফলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ এখন জন আলফ্রেড টিনিসউড।

টাইটানিক জাহাজ ডুবির বছরেই জন্ম

১৯১২ সালের ২৬ আগস্ট ব্রিটেনের লিভারপুলে জন্মগ্রহণ করেন জন আলফ্রেড টিনিসউড। একই বছর টাইটানিক ডুবে গিয়েছিল। ৫ এপ্রিল ২০২৪ অনুযায়ী সঠিক বয়স হল ১১১ বছর ২২৩ দিন।

দেখেছেন দুটি বিশ্বযুদ্ধ

১১১ বছর বয়সে, আলফ্রেড সাউথপোর্টে একটি কেয়ার হোমে থাকেন। জীবনে গ্রেট ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে করোনা মহামারী পর্যন্ত দুটি বিশ্বযুদ্ধই দেখেছেন। বয়স যখন ২৭ তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ফাইন্যান্স বিভাগে যোগ দেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে রেবর্ড হস্তান্তর করছেন গিনেস বুকের দল

দৃষ্টিশক্তির সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সে যুদ্ধে হিসাব ও নিরীক্ষা, আটকে থাকা সৈন্যদের শনাক্ত, খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থায় কাজ করেন। বর্তমানে জন আলফ্রেড একমাত্র বয়স্ক ব্যক্তি, যাঁর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

লিভারপুলের একজন সমর্থক

প্রথম জীবন থেকেই ফুটবল ক্লাব লিভারপুলের সমর্থক জন আলফ্রেড। লিভারপুলের এ পর্যন্ত বিজয়ী আট খেলার আটটি এফএ কাপ ও উনিশটি লীগ টাইটেলের মধ্যে ১৭টিরই সাক্ষী। তিনি ভীষণ কথা বলতে পছন্দ করেন।

তরুণ প্রজন্মের জন্য আলফ্রেডের উপদেশ

‘‘সব সময় চেষ্টা করবে নিজে নতুন কিছু শেখার। অন্যকে নতুন কিছু শিখানোর। তোমার যা আছে, তা দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করো, না হলে তা সফল হবে না।’’

স্ত্রীর মৃত্যুর পরে হঠাৎই একা হয়ে পড়েন জন আলফ্রেড টিনিসউড

সব কাজ নিজেই করেন

দৈনন্দিন কাজগুলো নিজের হাতেই করেন। কারও সাহায্য ছাড়াই বিছানা থেকে উঠেন। নিয়মিত সংবাদের আপডেট রাখার জন্য রেডিও শোনেন। নিজের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিজেই করেন। নিজের দীর্ঘায়ুর জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন তিনি।

যা খেয়ে এতটা ফিট জন আলফ্রেড টিনিসউড

প্রতি শুক্রবার তিনি মাছ ও চিপস খান। আলফ্রেড বলেছেন যে তিনি কোনও বিশেষ ডায়েট অনুসরণ করেন না। ‘আমাকে যা দেওয়া হয় আমি তা খাই। বাকিরাও তাই করেন। আমার কোনও বিশেষ ডায়েট নেই। তবে, তিনি ধূমপান করেন না।

জন আলফ্রেড টিনিসউড এর একাল ও সেকাল

দীর্ঘ জীবনের জন্য সংযম অনুশীলনের কথা বলেছেন আলফ্রেড। তার মতে, ‘আপনি যদি বেশি পান করেন, বেশি খান বা বেশি হাঁটেন, তাহলে আপনার ক্ষতি হবে। কারোরই কোনও কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।’

জন আলফ্রেড টিনিসউড এর জীবন দর্শন

দীর্ঘায়ু পেতে মন থেকে ভালো থাকা জরুরি। ৪৪ বছর এক সাথে ঘর করার পর স্ত্রী পরপাড়ে চলে যান। হঠাৎই একা হয়ে পড়েছিলেন জন আলফ্রেড টিনিসউড। তবে মন থেকে কখনও ভেঙে পড়েননি তিনি।

মেয়ে, নাতি ও নাতির ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভরা তার সংসার। সারাক্ষণ হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করেন। খারাপ লাগাকে প্রশ্রয় দেন না একেবারেই। কখনো সময়ে খাবার খান ইচ্ছে হলে অনিয়মও করেন। নিজের খেয়ালে চলেন। সিনেমা দেখেন।

জন আলফ্রেড টিনিসউড একটাই ইচ্ছে, যত দিন বাঁচবেন সুস্থ থাকতে চান।  চেহারায় জৌলুস কমেছে। চামড়া কুঁচকে গেছে। তবে শারীরিকভাবে অত্যন্ত ফিট। বার্ধক্যজনিত সামান্য কিছু শারীরিক সমস্যা ছাড়া বড় কোনও অসুখ নেই। রোজ বিকালে বন্ধুদের সাথে হাঁটতে বের হন। হাঁটাচলায় এখনও গতি রয়েছে।