আরব লীগ

বহিষ্কারের এক দশক পরে আরব লীগে ফিরলো সিরিয়া

গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়নের অভিযোগে আরব লীগ থেকে বহিষ্কারের ১০ বছর পর আবারও জোটে ফিরেছে সিরিয়া। ওই নিপীড়নের ফলেই দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধের শুরু হয়েছিল।

এই পদক্ষেপ দামেস্কের সাথে অন্য আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নমনীয় হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

চলতি মাসের শেষদিকে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনের আগে সিরিয়ার নতুন করে জোটে ফেরার ফলে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যোগ দিতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে আমেরিকা ও ব্রিটেন এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সিরিয়া নতুন করে জোটে ফিরে যাওয়ার যোগ্য নয়। কিন্তু সিরিয়া সংকট সমাধানে আরব লীগের দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্যকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, ব্রিটেন ‘আসাদ সরকারের সাথে যুক্ত না হওয়ার’ আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে, কারণ আসাদ ‘নিরপরাধ সিরিয় নাগরিকদের আটক, নির্যাতন ও হত্যা’ করা অব্যাহত রেখেছেন।

এক বিবৃতিতে, সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আরব লীগের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত হয়েছে দেশটি এবং ‘বৃহত্তর আরব সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের’ আহ্বান জানিয়েছে।

কায়রোতে অনুষ্ঠিত যে বৈঠকে সিরিয়াকে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তাতে এ জোটের ২২ সদস্যদের মধ্যে ১৩টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

তারা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বন্ধ করা এবং এর ফলে তৈরি হওয়া শরণার্থী ও মাদক চোরাচালান সংকট সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য এবং কাজের সুযোগের অভাবে অনেকেই মাদক ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনে এসেছে।

মিশর, সৌদি আরব, লেবানন, জর্ডান ও ইরাককে নিয়ে এখন একটি কমিটি গঠন করা হবে যার কাজ হবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বন্ধ করা। পাশাপাশি শরণার্থী ও মাদক চোরাচালানের মতো সমস্যা সমাধানে দেশটিকে সহায়তা করা।

আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইত বলেছেন, এ পদক্ষেপ সিরিয়ার সংকট সমাধানের একটি প্রক্রিয়ার শুরু, যা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, এ সিদ্ধান্তের মানে এই নয় যে আরব দেশগুলো সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করছে। সে সিদ্ধান্ত প্রতিটি দেশ নিজের মতো করে নেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আরব লীগ
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসি ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গৃহযুদ্ধের সময় তিন লাখেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আটক বা নিখোঁজ হয়েছেন আরো এক লাখের মতো মানুষ।

যুদ্ধের আগের সিরিয়ার মোট ২ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক হয় সিরিয়ায় বাস্তুচ্যুত মানুষে পরিণত হয়েছেন, নাহলে শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

ইদলিবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্রোহী অধ্যূষিত অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত সিরিয়ার নাগরিকরা বলেছেন যে, তারা আরব লীগের সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছেন।

তারা বলছেন, “যে শিবিরে তারা ভুগছেন আর যন্ত্রণা সয়ে বসবাস করছেন সেখান থেকে বের করে আনার বদলে আবর লীগের নেতারা অপরাধীদের হাত থেকে তাদের রক্তের দাগ মুছে দিয়েছে। এর জন্য আরব লীগকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।

বাশার আল আসাদ ২০১৫ সালে রাশিয়ার সহায়তায় দেশটির ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেন। এর ফলে প্রতিবেশী দেশগুলো আসাদকে ক্ষমতায় রেখেই ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে বাধ্য করে।

গত ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় বিধ্বংসী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর, আরব লীগের সাথে সিরিয়ার সম্পর্ক পুনস্থাপনের বিবেচনাকে গতিশীল করেছিল।

এর অংশ হিসেবে মে মাসের শুরুতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাথে দেখা করেছেন।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফরটি সিরিয়াকে ফিরিয়ে আনার জন্য আরব দেশগুলোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

ইব্রাহিম রাইসির এই সফরের পর মিশর ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও সফর করেছেন এবং তিউনিসিয়ার সাথে সিরিয়ার পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আরব দেশ সফর করেছেন। এসব কারণেই আরব বিশ্বের নেতাদের মন গলে যায় বলে মনে করেন কূটনীতিকরা।

তবে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা ও ব্রিটেন প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করবে না বলে জানিয়েছে। তবে অন্য কোনো দেশ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।