ঈদ যাত্রার স্বস্তির নেপথ্যে

প্রতি বছর ঈদের আগে রেল স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালের পরতে পরতে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির চিত্র ফুটে উঠে টেলিভিশনসহ সকল সংবাদ মাধ্যমে। কমলাপুর রেল স্টেশন, গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনাল, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি ও এমনকি সদরঘাটেও হই হুল্লোড়, টিকিট না পাওয়ার হাহাকারের সাথে যে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল এবার ঈদ যাত্রায় এসব স্থানে চিরাচরিত সেই ভোগান্তির দৃশ্য দেখা যায়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, ঈদে ঘরমুখী মানুষের এই স্বস্তির পেছনে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টির ভূমিকা ছিল তা হলো যোগাযোগ অবকাঠামোতে বর্তমান সরকারের সুপরিকল্পিত উন্নয়ন ভাবনা ও তার সফল বাস্তবায়ন এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা। যেমন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রী পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়ি গিয়েছেন কোনরূপ ভোগান্তি ছাড়াই।

এছাড়া উত্তরবঙ্গমুখী মহাসড়ক চার লেনে প্রশস্তকরণ ও ডিভাইডারবিহীন দুই লেন একমুখী করায় দীর্ঘদিনের যানজটের অবসান হয়েছে। শোনা যায়নি যাত্রী সাধারণেরও কোনো অভিযোগ। সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ যাত্রায় ঢাকা ছাড়েন প্রায় এক কোটি মানুষ আর আন্তঃজেলায় চলাচল করেন ৫ কোটির বেশি মানুষ। কিন্তু কোথাও ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। যোগাযোগ খাতে উন্নয়নের সুফল যে দেশের মানুষ পাচ্ছে তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এবারের ঈদ। পদ্মাসেতুসহ অনেক ছোট বড় সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, চার লেন, ছয় লেন সড়ক, অগণিত ফ্লাইওভারের বহুমুখী ব্যবহার সড়কে এনে দিয়েছে শৃঙ্খলা। এছাড়া জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগ ও সেতু কর্তৃপক্ষের সমন্বিতভাবে সড়ক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিল।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে এবার দেশবাসী ভোগান্তিহীন ঈদ উদযাপন করেছে। ঘরমুখো যাত্রীদের এমন ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা এর আগে কখনোই দেখেনি দেশবাসী। ঈদের অনেক আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস কর্মীদের ছুটি দেয়ার মতো সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কারণেও বিষয়টি আরো সহজতর হয়েছে। অন্যদিকে এবার সড়ক দুর্ঘটনাও ছিল না বললেই চলে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের যোগাযোগ অবকাঠামোর খাতে দীর্ঘদিনের সুচিন্তিত উন্নয়ন পরিকল্পনার সুফল পেতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। তবে চলমান উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো পুরোপুরি চালু হলে দেশের মানুষ এর পুরোপুরি সুফল ভোগ করার সুযোগ পাবে, যা খুব বেশি দূরে নয়।

লেখক: হিমালয় আহমেদ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট