অসংক্রামক রোগ কী, এটি কেন হয়? (পর্ব-১)

সারা বিশ্বে বর্তমান সময়ে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে অসংক্রমণ রোগীর সংখ্যা। বাংলাদেশেও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন লাখো মানুষ।

নন কমিনিকেবল ডিজিসেস বা অসক্রমক রোগসমূহ এই টার্মের সাথে আমরা অনেকেই হয়তো তেমন পরিচিত না। তবে এই টার্মটি এই শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

কারণ এই সেই রোগ যার কারণে প্রতি ১০০ জনের অন্তত ৭৪ জন মানুষের মৃত্যুর জন্য এটি দায়ী। পাশাপাশি অন্তত কয়েক কোটি মানুষের অক্ষমতার জন্য এই রোগটি দায়ী বলে চিকিৎসা গবেষণায় উঠে এসেছে।

কিন্তু আমরা জানি কী এই অসংক্রমক রোগসহূহ? কোন রোগসমূহ এর আওতায় পড়ে? আর কিভাবেই বা হয় এই ভয়ঙ্কর মরণঘাতী রোগসমূহ?

ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ফ্যাটি লিভার, ক্যান্সার, ফুসফুসের সিওপিডি ইত্যাদি হচ্ছে অসংক্রমক রোগ।

এই রোগের এমন নামকরণ এর কারণ হলো এরা ছোঁয়াচে নয় অর্থাৎ এরা ইনফেকশন এর মতো মানুষ থেকে মানুষের বা অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের মাঝে ছড়ায় না।

যেমন -একজন মানুষের কোভিড ১৯ বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এয়ার ড্রপলেট থেকে ছড়াতে পারে। আবার চিকেন পক্স এর কোন রোগীর চামড়া বা স্কিনের র‍্যাশ থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়াতে পারে।

যার আগে কখনো চিকেন পক্স হয় নাই তার শরীরেও রোগটি ছড়াতে পারে। আবার মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন-মশাবাহিত প্লাজমোডিয়াম দিয়ে কারো ম্যালেরিয়া হতে পারে, এডিস মশারবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।

সারা বিশ্বে বর্তমান সময়ে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা। বাংলাদেশেও এই রোগসমূহে আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন লাখো মানুষ।

নন কমিনিকেবল ডিজিসেস বা অসক্রামক রোগসমূহ এই টার্মের সাথে আমরা অনেকেই হয়তো তেমন পরিচিত না। তবে এই টার্মটি এই শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

আমেরিকার একটি স্টাডি অনুযায়ী, এরা সেই রোগসমূহ যারা প্রতি ১০০ জনের অন্তত ৭৪ জন মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। পাশাপাশি অন্তত কয়েক কোটি মানুষের অক্ষমতার জন্য এই রোগসমূহ দায়ী বলে চিকিৎসা গবেষণায় উঠে এসেছে।

কিন্তু আমরা জানি কী এই অসংক্রামক রোগসমূহ? কোন রোগসমূহ এর আওতায় পড়ে? আর কিভাবেই বা হয় এই ভয়ঙ্কর মরণঘাতী রোগসমূহ?

এক কথায় ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ফ্যাটি লিভার, ক্যান্সার, ফুসফুসের সিওপিডির মতো বেশ কিছু অসুখ এই অসংক্রমক রোগসমুহের আওতাভুক্ত।

এই রোগের এমন নামকরণ করার কারণ হলো এরা ছোঁয়াচে নয় অর্থাৎ এরা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার মতো মানুষ থেকে মানুষের বা অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের মাঝে ছড়ায় না।

যেমন-একজন মানুষের কোভিড ১৯ বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, এয়ার ড্রপলেট থেকে ছড়াতে পারে। আবার চিকেন পক্স এর কোন রোগীর চামড়া বা স্কিনের র‌্যাশ থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়াতে পারে।

আবার মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন-মশাবাহিত প্লাজমোডিয়াম জীবাণু দিয়ে কারও ম্যালেরিয়া হতে পারে, এডিস মশারবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে সুস্থ ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।

অসংক্রমণ রোগ প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে গ্রীন হোপ হেলথ অর্গানাইজেশাষ

এছাড়া এক ব্যক্তির রক্তে যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, সিফিলিস ইত্যাদি জীবাণু থাকে তো তিনি যদি অন্য কাউকে রক্ত দেন সে ক্ষেত্রে রক্তের মাধ্যমে এই জীবাণুবাহিত রোগগুলো ছড়াতে পারে।

তাছাড়া এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির যৌন মিলনের মাধ্যমে এইডস রোগটি তার পার্টনারের কাছে চলে আসতে পারে। এটি ভয়াবহ রোগ।

এভাবে কমিউনিকেবল ডিজিসেস বা সংক্রামক রোগগুলো এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিকে ছড়ালেও অসংক্রামক রোগগুলো কখনো এভাবে ছড়ায় না।

একটু মজা করে বললে, আমরা কি কখনো শুনেছি যে ডায়াবেটিস রোগীর হাঁচি-কাশি থেকে সুস্থ কোন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হয়েছে কিংবা হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্ত চাপের রোগী সুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেয়ার কারণে রক্তগ্রহীতার হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপ হয়ে গেছে।

অবশ্যই না, এভাবে এই রোগগুলো একজন থেকে আরেক জনের কাছে ছড়ায় না, তাই তাদেরকে non communicable diseases বা অসং ক্রমক রোগ বলা হয়। দিনদিনই এই রোগসমূহ প্রকট আকার ধারণ করছে।

তাহলে প্রশ্ন থাকে সংক্রামক রোগের সংক্রমিত হওয়ার বিশেষ কারণসমুহ যেমন-কোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবাণু দায়ী,,,কিন্তু অসংক্রামক রোগের কারণ যদি না থাকে তাহলে কেন ও কিভাবে হয় এই রোগগুলো।

অনেক দীর্ঘ কথাবার্তা আছে এ বিষয়ে তবুও এক কথায় এর উত্তর দিতে গেলে‘‘ আমাদের অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রায় এ রোগগুলোর জন্য দায়ী।’’

যেগুলোর মধ্যে আছে: আমাদের অতিরিক্ত ওজন, স্থুলতা,খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, লেস ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটি বা শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।

এই বিষয়গুলো প্রত্যক্ষভাবে নন কমিউনিকেবল ডিজিসের সাথে সম্পর্কিত। যে বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে কখনোই এই রোগসমুহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব না। (চলবে)

লেখক: ডাঃ রাজীব হাসান খান।

এমবিবিএস, এফসিপিএস পার্ট+২ (নিউরোমেডিসিন), এফসিপিএস ট্রেইনি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সভাপতি গ্রীনহোপ হেলথ অরগানাইজেশান।