হোয়াইট হাউস এর পোষা প্রাণি 

ডোনাল্ড ট্রাম্প বাদে প্রায় সব মার্কিন প্রেসিডেন্টেরই কোনো না কোনো পোষা প্রাণী ছিল। হোয়াইট হাউজে এসব প্রাণী তাদের নিজস্ব ভূমিকার জন্য ব্যাপক আলোচিত তবে কিছু ঘটনা আবার সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের পাবলিক ইমেজ ভালো রাখার পেছনেও তাদের ভূমিকা অপরিসীম।

এ ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিটি মানসিক চাপমুক্ত থাকতেও হোয়াইট হাউজে থাকা পোষা প্রাণীটিকে নিয়ে সময় কাটান, অবকাশ করেন। যা যুগে যুগে চিরাচরিত দৃশ্য।

বড় বড় ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থেকে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই হয়েছে এমন অসংখ্য প্রাণী বসবাস করেছে হোয়াইট হাউজে। ১৯৪১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সেখানে উপস্থিত ছিল ‘ফালা’ নামে রুজভেল্টের কুকুরটি।

সে সময়ের প্রায় সব গণমাধ্যমেই রুজভেল্ট ও চার্চিলের মতো ফালাও বিশেষ গুরুত্ব পায়। ফার্স্ট লেডি এলিনর রুজভেল্ট ফালার জীবনী নিয়ে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন।

পরবর্তী ফার্স্ট লেডিরাও এই ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। জর্জ বুশের স্ত্রী সাবেক ফার্স্ট লেডি বারবারা বুশ লিখেছিলেন মিলি নামে কুকুরটিকে নিয়ে। হিলারি যেমন লিখেছিলেন শকস আর বুড্ডিকে নিয়ে।

জো বাইডেনের শাসনামল:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক নেতা জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে পোষা প্রাণিদের দীর্ঘকালীন ঐতিহ্যের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে, যার খানিকটা ইতি টেনেছিলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছর সময়কালে হোয়াইট হাউসে কোনো কুকুর ছিল না। ১৮৬০ সালে অ্যান্ড্রু জনসনের পর তিনিই ছিলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যার কোনো কুকুর বা বিড়াল ছিল না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০০ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন যিনি হোয়াইট হাউসে পোষা প্রাণি রাখার ঐতিহ্যকে রক্ষা করেননি। তিনি কোন পোষ্য রাখেননি হোয়াই হাউজে।

হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হিসেবে জো বাইডেনের পূর্বসূরীরাও পোষা প্রাণি সাথে রাখতেন। তবে সবাই যে কুকুরই রাখতেন তা নয়। এর ব্যতিক্রমও ছিল। হোয়াইট হাউজের সেসব পোষা প্রাণিদের সম্পর্কে জানতেই এ আয়োজন।

বিশ্বমিডিয়ায় চ্যাম্প ও মেজর:

জো বাইডেন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হওয়ার পর সেখানে তিনি তার দুই পোষা কুকুরকে নিয়ে আসেন। জার্মান শেফার্ড চ্যাম্প ও মেজরকে তার সাথে হোয়াইট হাউসের প্রশস্ত বাসভবনের বাসিন্দা করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাইডেনের কুকুরগুলোর বড় ফ্যান রয়েছে। তাদের নামে একটি টুইটার পেজ আছে যেখানে হাজার হাজার ফলোয়ারও রয়েছে। প্রতিদিন সেসব ফ্যান ফলোয়ারা চ্যাম্প ও মেজরের কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত দেখেন।

জো বাইডেন ২০০৮ সালে যখন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তখন কুকুর ছানা চ্যাম্পকে উপহার হিসেবে পান। বাইডেনের নাতি-নাতনিরা কুকুরটির নাম রেখেছিলেন চ্যাম্প। তাই এই নামটির গুরুত্ব তার কাছে অনেক বেশি ছিল।

আমেরিকার ভার্জিনিয়া থেকে প্রকাশিত পলিটিকো ম্যাগাজিনের মতে, জো বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন তাকে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে পোষা প্রাণি উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি তার সিটের সামনে ও পেছনে বিভিন্ন ধরনের কুকুরের ছবি পোস্ট করেছিলেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বাইডেন জানান, তাঁর বাবা তাকে যেভাবে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিতেন ঠিক একইভাবে চ্যাম্পও তাকে বাবার মতো ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়। চ্যাম্প ২০০৮ সালে ছানা থাকলেও এখন প্রাপ্ত বয়স্ক প্রাণিতে পরিণত হয়েছে।

২০০৮ সাল থেকে জো বাইডেন ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে রয়েছে চ্যাম্প। সে সময় বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করেছিলেন।

তবে ২০২১ সালের ১৯ জুন চ্যাম্প মারা গেছে। জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন টুইটে ১৩ বছরের পুরোনো এই সঙ্গীর প্রতি শোক প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরা আমাদের মিষ্টি, ভালো ছেলেটিকে ভালোবাসি। সব সময় তার কথা মনে পড়বে।’

অপরদিকে কুকুর মেজর ২০১৮ সালে বাইডেনের সঙ্গী হয়। বাইডেনের নিজের অঙ্গরাজ্য ডেলাওয়ার হিউম্যান অ্যাসোসিয়েশন মেজরকে পোষার জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। এর পর থেকে তাদের সঙ্গেই আছে মেজর।

প্রেসিডেন্সিয়াল প্রচারণা চলাকালে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে কুকুর মেজরের প্রশংসা করে বাইডেন বলেন, ” আমার বড় বড় অনুপ্রেরণার পেছনে ও পথচলায় মেজরের অবদান থাকে।”

ছায়াসঙ্গী বো ও সানি:

ডেমোক্রেটিক নেতা বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে পর্তুগিজ ওয়াটার ডগস বো ও সানি হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা ছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে বারাক ওবামা তার কন্যাদের বলেছিলেন: “তোমরা নতুন কুকুরছানা পাবে। যারা আমাদের সাথে হোয়াইট হাউসে আসছে।”

২০০৯ সালে বো প্রথমবারের মতো ওবামা পরিবারের সদস্য হয়। এরপর ২০১৩ সালে সানিকে পরিবারের সদস্য পোষ্য হিসেবে নেওয়া হয়। ওবামার পরিবারের ভাষায়, ‘সানি বো’র ছোট বোন’।

২০০৯ সালে বোকে ওবামার কন্যাদের জন্য সিনেটর টেড কেনেডি উপহার দিয়েছিলেন আর ২০১৩ সালের আগস্টে সানি তাদের পরিবারের সাথে যুক্ত হয়।

বো এর বুক ও সামনের দুই পা সাদা। তবে পুরো শরীর কালো। সানি বেশি জনপ্রিয় তা প্রমাণ হয়েছে। এমনকি অফিসিয়াল কর্তব্যগুলোতে সানি সহায়তা করেছিল।

ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা তার স্বামী বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে একবার বলেছিলেন,” সবাই বো ও সানিকে দেখতে ও ছবি তুলতে চায়। তাদের দেখানোর জন্য মাসের শুরুতে আমি সময়সূচী করে দেয়ার অনুরোধ নিয়ে একটি মেমো পেয়েছি এবং তাদের দেখা পাওয়ার জন্যও অনুমোদন করতে হয় আমাকে।”

শয্যাসঙ্গী বুড্ডি ও শকস:

ডেমোক্রেটিক নেতা বিল ক্লিনটন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বুড্ডি নামে চকোলেট কালারের একটি ল্যাব্রাডর কুকুর ছিল। পাশাপাশি শকস নামেও একটি বিড়ালও হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা ছিল। এই জুটি প্রায়ই মারামারি করত।

তাদের মারামারির খবর বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতে ঢালাও করে স্থান পেতো। এমনকি নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের মতো গণমাধ্যমও তাদের খবর প্রকাশ করতো। একবার এক নিবন্ধে রসিকতা করে তাদের ‘নিমেসেস’ বলে সম্বোধন করেছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস।

১৯৯৮ সালে বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে কালো পশম, সাদা চেহারা ও অ্যাম্বার চোখের শকস বিড়ালটি সবার নজর কেড়েছিল। ওই বছর মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে কুকুর ও বিড়ালের মারামারি মন্ত্রিসভা সদস্যরা উপভোগ করছিল। তাদের এমন কীর্তিতে হাস্যরসে ভরে উঠেছিল বৈঠকখানা।

প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ২০০০ সালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ আমার স্ত্রী হিলারি কখনও দূরে থাকলে মাঝে মাঝে বুড্ডি আমার পাশে ঘুমায়। সে আমার প্রকৃত বন্ধু। ‘’

এমনকি হিলারি ক্লিনটন দুটি পোষা প্রাণী সম্পর্কে একটি বই লিখেছিলেন, সেখানে শকস ও বুড্ডিকে প্রিয় হিসেবে সম্বোধন করেছেন। সেখানে তাদের বন্ধুত্ব ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

আনন্দের উৎস মিস বেজলি ও বার্নি:

পোষা প্রাণীর মধ্যে রিপাবলিকান নেতা জর্জ ডব্লিউ বুশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মিস বেজলি ও বার্নি নামে হোয়াইট হাউসে দুটি ছোট স্কটিশ কুকুর ছিল। ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বার্নিকে আর ফাস্টলেডি লরা বুশ মিস বেজলিকে সাথে নিয়ে চলাফেরা করতেন।

হোয়াইট হাউসে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে কুকুরগুলোর নামে শিরোনাম দেয়া হয়। যেমন “এ ভেরি বেজলি ক্রিসমাস” এবং “বার্নি ক্যাম” এমন অনেক ভিডিও ছাড়া হয়।

প্রেসিডেন্ট বুশ মিস বেজলিকে “আনন্দের উৎস” হিসাবে বর্ণনা করতেন। একবার তিনি বলেছিলেন, বার্নি আমার আনন্দের সাথী। ঘরের বাইরে তার সাথে আমি ভালবাসা শেয়ার করি।

চেতনার প্রতীক ইয়োকি ও হিম:

মার্কিন ৩৬তম প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের প্রিয় পোষা কুকুরটির নাম ছিল ইয়োকি। প্রেসিডেন্সিয়াল জাদুঘরের ওয়েবসাইট অনুসারে, জনসনের কন্যা লুসি ১৯৬৬ সালে থ্যাঙ্কসগিভিং ডে উপলক্ষে তাদের অঙ্গরাজ্য টেক্সাসের একটি পেট্রল স্টেশনে ইয়োকিকে পেয়েছিলেন।

এর পরের বছরের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট জনসন হোয়াইট হাউজের দক্ষিণ লনের একটি কান্ট্রি ফেয়ারে তাঁর পোষা কুকুর ইয়োকিকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

তারপরের বছর জন্মদিনে কন্যা লুসি কুকুরটি তার বাবা প্রেসিডেন্ট জনসনকে উপহার দিয়েছিলেন। জনসন-ইয়োকি জুটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে এক সাথে সাঁতার কাটাসহ সব কিছু করতো।

প্রেসিডেন্ট ও পোষা প্রাণীর মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে সেই বন্ধনে আমেরিকার চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে বলে একবার প্রেসিডেন্ট জনসনের নাতনী দাদার স্মৃতিচারণ করেছিলেন।

একবার প্রেসিডেন্ট জনসনের একটি ছবি প্রকাশিত হয়। ছবিতে দেখা যায়, তার পোষা চারটি কুকুরের মধ্যে ‘হিম’নামে কুকুরটিকে তিনি কান ধরে ওপরে তুলে ধরেছেন। ফলে প্রাণী সংরক্ষণবাদীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

মূলত বিরোধী শিবিরের ইন্ধনেই এ ধরনের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন লিন্ডন। পরে এ ঘটনার জবাবে প্রেসিডেন্ট নিজেই জানিয়েছিলেন যে, এ ধরনের হাউন্ড প্রজাতির শিকারি কুকুরকে কানে ধরলেও ব্যথা পায় না।

জনসনের পক্ষ নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানও বলেছিলেন, ‘এই ঘটনার সমালোচনাকারীরা জানেই না কীভাবে হাউন্ড কুকুরদের হ্যান্ডেল করতে হয়।’

আমেরিকার সিনেমায় ফালা:

হোয়াইট হাউসের সর্বাধিক বিখ্যাত কুকুরগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের প্রিয় স্কটিশ টেরিয়ার ফালা। ১৯৪০ সালে ফালাকে রুজভেল্টকে তার এক কাজিন উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট সেটিকে ‘মারে দ্য আউটল ফালাহিল’ নামকরণ করেছিলেন।

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরী এবং যাদুঘরের তথ্য অনুসারে, ফালার জন্য প্রতিদিন সকালের নাস্তার ট্রেতে একটি হাড় থাকতো। এমনকি তার ভক্ত- অনুরাগীদেরে ইমেইলের জবাব দেওয়ার জন্য একজন সচিবও নিয়োগ করা হয়েছিল।

ফালার জন্মদিনের জন্য নিজ হাতে কেক তৈরি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। হোয়াইট হাউসের লনে ৪ এপ্রিল ১৯৪৪ সালে নিজের জন্মদিনে ফালার কেক খুব মজা করে চেটে পুটে খাওয়ার দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করেছিল।

এর আগে ১৯৪২ সালের একটি প্রচারণার সময় ফালা রাবারের খেলনা সবাইকে দিচ্ছিল। কুকুরের এমন কাণ্ড ওই সময় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। ফালাকে নিয়ে একাধিক সিনেমাও তৈরি করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট মেমোরিয়ালে রুজভেল্টের পাশে একটি মূর্তিতে স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে ফালার।

ফালায় সমালোচনায় রুজভেল্ট:

১৯৪৪ সাল। খবর রটে গেল, প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট আলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে অবকাশ যাপন শেষে ফেরার সময় ভুল করে ফালা-কে ফেলে চলে এসেছিলেন৷ পরে নৌ বাহিনীর ডেস্ট্রয়ার জাহাজ পাঠিয়ে স্কটিশ টেরিয়ার কুকুরটিকে নিয়ে আসা হয় হোয়াইট হাউজে৷

জনগণের টাকার এমন অপব্যবহারের খুব সমালোচনা হয়েছিল তখন৷ এক নির্বাচনী সভায় রুজভেল্ট মিনতি করে বলেছিলেন কুকুরের বিষয়টি নিয়ে যেন আর ঘাটাঘাটি না করা হয়৷

আমেরিকার ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হোয়াইট হাউজের ভেতরে রুজভেল্টের ছেলেমেয়েরা বিরল যেসব প্রাণী প্রতিপালন করত, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জনাথন এডওয়ার্ড নামে ছোট্ট একটি ভাল্লুক, বিল নামে একটি সরীসৃপ, জোসিয়া নামে একটি ব্যাজার, এলি ইয়েল নামে একটি নীল ম্যাকাউ, একটি হায়েনা, একটি প্যাঁচা, পিটার নামে একটি খরগোশ, অ্যালঙ্কুইন নামে একটি টাট্টু ঘোড়া, ব্যারন স্পার্কল নামে এক ঠ্যাংওয়ালা একটি মুরগি ও বিভিন্ন নামে বেশ কয়েকটি গিনিপিগ।

সম্মানজনক খেতাবপ্রাপ্ত ম্যাকোরনী:

হোয়াইট হাউজে কুকুর বিড়ালের অনেক স্মৃতির বাইরেও অন্য পোষা প্রাণীর পদচারণা ছিল। তেমনি এক নাম ম্যাকোরনী। এটি কেবল বিড়াল ও কুকুর নয় এটি “প্রথম পোষা প্রাণী” র সম্মানজনক খেতাবও অর্জন করেছে। এটি একটি ঘোড়া।

জন এফ কেনেডির কন্যা ক্যারোলিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের কাছ থেকে ম্যাকোরনী ঘোড়াটি উপহার হিসেবে পেয়েছিল।

১৯৬২ সালে কেনেডি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে হোয়াইট হাউসের সিক্রেট সার্ভিসের লোকেরা তার কন্যা ক্যারোলিন কেনেডিকে তার পনি (ছোট ঘোড়া), ম্যাকারনি (বড় ঘোড়া)তে চড়াতেন।

সাধারণত পনি ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে থাকে তবে প্রায়ই এটিকে হোয়াইট হাউসে আনা হয়। এটি হোয়াইট হাউসের মাঠের চারদিকে ঘোরাঘুরি করে।

প্রেসিডেন্সিয়াল পোষ্য মিউজিয়ামের তথ্য অনুসারে, ফাস্ট লেডি জ্যাকোলিন কেনেডি যখন ইরানের সম্রাজ্ঞী ফারাহ পাহলাভিকে বরণ করেন তখন অতিথিদের বরণ করা ড্যাফোডিল ফুলগুলো খাওয়ার চেষ্টা করে ম্যাকরিনি।

অন্যান্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদের পোষ্যদের মতো ম্যাকারনিও বিখ্যাত হয়েছিলেন, সেও ফ্যান মেল পেয়েছিল এমনকি লাইফ ম্যাগাজিনের কভারেও তার উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। কুকুর বিড়াল ও ঘোড়ার বাইরেও হোয়াইট হাউসে পাখি, ইদুর প্রজাতি ছোট ছোট প্রাণী হামস্টারও পোষা হতো। প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি পোষ্যগুলোও যুগে যুগে আলোচিত ছিল।

আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে কিং তুত:

৩১তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভারের ‘কিং তুত’ নামে একটি বেলজিয়ান পুলিশ ডগ ছিল। নির্বাচনী প্রচারণার সময় এই কুকুরটির সঙ্গে হুভারের ছবি গোটা আমেরিকায় ছড়িয়ে দেয় সমর্থকরা।

পোষা কুকুরের সঙ্গে হুভারের ছবিটি বেশ জনপ্রিয় হয় সে সময়। পরে হুভারের সঙ্গী হয়ে হোয়াইট হাউজেও পা রাখে কিং তুত।

চেকার্সে জনপ্রিয়তা বাড়ে নিক্সনের:

১৯৫২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ারের অধীনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রার্থিতা ঘোষণার সময় রিচার্ড নিক্সনের বিরুদ্ধে একটি তহবিল গোপন করার অভিযোগ ওঠে। এই তহবিল ছিল মূলত চেকার্স নামে তার পোষা একটি কুকুরের জন্য।

গোপন তহবিলের অস্তিত্ব স্বীকার করে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে নিক্সন বলেছিলেন, ‘এই কুকুরটিকে আমি উপহার হিসেবে পেয়েছি। আর এই উপহার আমি ফেরত দিতে চাই না।’

ককার স্পেনিয়েল প্রজাতির সাদা-কালো রঙের এই কুকুরটিকে নিক্সনের মেয়েরা খুব পছন্দ করত। কুকুরটির পক্ষে সাফাই গাওয়ার পর নিক্সনের জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। ফার্স্ট লেডি মাইমি আইজেনহাওয়ার তাকে ‘উষ্ণ হৃদয়ের ব্যক্তি’বলে সম্বোধন করেছিলেন।

আব্রাহাম লিঙ্কনের প্রিয় ‘ফিডো’:

আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের বেশ কিছু পোষা প্রাণী ছিল। এর মধ্যে ছিল ন্যানি ও নাঙ্কো নামে দুটি ছাগল। জ্যাক নামে একটি টার্কি মোরগও ছিল। মূলত বড়দিনে ভূরিভোজ করার জন্য এই টার্কি মোরগটিকে হোয়াইট হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে লিঙ্কনের ছেলে টেড লিঙ্কনের মায়া হলে প্রাণে বেঁচে যায় টার্কিটি। পরে হোয়াইট হাউজের ভেতরেই সদর্পে বসবাস করেছে জ্যাক।

লিঙ্কন পরিবারের সঙ্গে থাকা অন্য প্রাণীদের মধ্যে ফিডো ও জিপ নামে দুটি কুকুর ছিল। ট্যাবি ও ডিক্সি নামে দুটি বিড়ালও ছিল। এ ছাড়া একটি খরগোশ ও ওল্ড বব নামে একটি ঘোড়াও ছিল।

আব্রাহাম লিঙ্কনের পোষা প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল ফিডো। প্রতিপালকের মতো তাকেও নির্মম পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল। হোয়াইট হাউজের পরিবেশ পছন্দ ছিল না ফিডোর।

তাই তাকে ইলিনয়ের স্প্রিংফিল্ডে এক বন্ধুর বাড়িতে রেখেছিলেন লিঙ্কন। হোয়াইট হাউজে টানা বসবাস না করলেও ফিডোকে প্রেসিডেনশিয়াল পোষ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।

লিঙ্কনের সবচেয়ে ছোট দুই ছেলে উইলি ও টেড ফিডোকে অত্যন্ত ভালোবাসত। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ফিডো প্রতিদিন বাড়ির বাইরে লিঙ্কনের ফেরার জন্য অপেক্ষা করত এবং ফিরে এলেই লিঙ্কনের হাতে কোনো ব্যাগ থাকলে এটি নিজের মুখে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ছুটে যেত।