গ্যাসের চুলার দরদাম

খাবারের স্বাদ রান্নায়, আর রান্নার স্বাদ চুলায়। রাইস কুকার ব্যবহার করে পাকের চেয়ে চুলার পাকের স্বাদই ভিন্ন। ফলে চুলার কোনো বিকল্প নেই।

গ্রামগঞ্জে মাটি ও সিমেন্টের চুলার প্রচলন থাকলেও শহুরে কিংবা নাগরিক জীবনে গ্যাসের চুলার প্রচলনই সবচেয়ে বেশি।

মানুষের রুচিবোধ ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নানা রকম ও নানা সুযোগ সুবিধার গ্যাসের চুলার উৎপত্তি ঘটেছে।
বাজারে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানান রকম গ্যাসের চুলা।

বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সাধারণত বাজারে লোহা, টিন, স্টিল, কাঁচ ও মার্বেল পাথরের তৈরি চুলা পাওয়া যায়। এসব চুলার মধ্যেও রয়েছে ব্র্যান্ড ও নন ব্র্যান্ডের চুলা।

যেমন: দেশীয় কোম্পানি আশা, ইউনিভার্সেল, আরএফএল, ভিশন, ওয়ালটন, গাজী, কোয়ান্টাম, নিক্কো, কমেট। বিদেশি কোম্পানির মাঝে রয়েছে অ্যারিস্টোন (ইতালি) কিনবো (তুরষ্ক), আকাই এলজি, মিয়ামেনজিয়াম,মিয়াকো, ডিজিনি, জেসিএলসহ অনেক ধরনের দেশি বিদেশি চুলা।

মিয়াকো গ্যাসবার্নার - Journals Monitor
মিয়াকো কোম্পানির গ্যাসের চুলা

দেশি ব্র্যান্ড:
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে এসব দোকানে দেশীয় ব্র্যান্ড বা নন ব্যান্ডের চুলা রয়েছে। এর মধ্যে নন ব্যান্ডের চুলা কোম্পানি হচ্ছে, আশা ও ইউনিভার্সেল। আর ব্যান্ডের মাঝ রয়েছে আরএফএল, ভিশন, গাজী, নিক্কো ও ওয়ালটন।

বিদেশি ব্র্যান্ড :
বাংলাদেশের সাধারণ মার্কেট কিংবা সড়কের পাশে গড়ে উঠা হার্ডওয়্যার দোকানগুলোতে সাধারণত নন ব্যান্ডের লোহা বা স্টিলের তৈরি চুলা পাওয়া যায়।

পক্ষান্তরে অভিজাত মার্কেটগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে এসব দোকানে বিদেশি খ্যাতিমান ব্র্যান্ডের চুলাই বেশি স্থান পেয়েছে। বসুন্ধরা সিটি মার্কেটের লেভেল ছয় এ এসব চুলার শো রোমও রয়েছে। রয়েছে দেশি বিদেশি ব্রান্ডের হরেক রকম চুলার সংগ্রহ।

চুলার রকমফের:
সাধারণত কাঁচ বা মার্বেল পাথর দিয়ে এসব চুলার বডি তৈরি। স্টার্টার সুইচ ঘুরালেই এসব চুলাতে আগুন জ্বলে। এগুলোকে অটোচুলাও বলে। এসব চুলার মান ভেদে দাম পড়বে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।

এই ধরনের চুলায় ২টি থেকে ৫টি বার্নার থাকে। বার্নারের সংখ্যার সঙ্গে দরদামও উঠানামা করে। এসব চুলার বিক্রয়োত্তর সেবার জন্য ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টি দেওয়া হয়। সাশ্রয়ী দামেও অটোচুলা রয়েছে।

এসবের মধ্যে অন্যতম হল আরএফএল, ভিশন, গাজী,  নিক্কো, কমেট, ইউনিভার্সাল, কোয়ান্টামসহ দেশি কিছু ব্র্যান্ডের চুলা। এরকম প্রতিটি চুলা পেয়ে যাবেন ২ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে।

আরএফএল ও ভিশন গ্যাসের চুলা- Journals Monitor
আরএফএল ও ভিশন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের চুলা

বাসার বহুল-ব্যবহৃত চুলাগুলোর বেশিরভাগই সাধারণ চুলা। এসব চুলায় দিয়াশলাই বা ম্যাচের কাঠি ব্যবহার করে আগুন জ্বালাতে হয়।

সাধারণত এই চুলাগুলো লোহা কিংবা স্টিলের হয়ে থাকে। এগুলোর মাঝে ওয়ান বার্নারের চুলার বর্তমান বাজার মূল্য ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকার মাঝে রয়েছে। আর টু বার্নারের ৬শ’ থেকে তিন হাজার টাকার মাঝেও রয়েছে।

বিদেশি গ্যাসের চুলার দরদাম:

রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশি মিয়াকো ব্রান্ডের গ্যাসের চুলার দাম ৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মাঝেও রয়েছে। মিয়ামানজিয়াম ব্র্যান্ডের চুলার দাম ৫ হাজার ২শ’ থেকে ১৪ হাজার ৫’শ টাকার মাঝেও রয়েছে।

গ্যাসের চুলার দরদাম
দৃষ্টি নন্দন ফিচার সমৃদ্দ গ্যাসের চুলা

এছাড়াও দৃষ্টি নন্দন ও ব্যবহারে বিভিন্ন ফিচার সমৃদ্ধ রিজকো ব্যান্ড ও মিডিয়া ব্যান্ডের গ্যাসের চুলা বিভিন্ন অনলাইন শপ ও রিটেইল শপে পাওয়া যাচ্ছে ৪ হাজার ৫শ’ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে।

ডিজনি ব্র্যান্ডের চুলার দাম ৩ হাজার ৮শ’ থেকে ২৫ হাজার টাকার মাঝেও রয়েছে। এসব চুলার বডি গ্লাস কিংবা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি।

অপরদিকে বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশি ব্র্যান্ডগুলো ভালো মানের গ্যাসের চুলার উৎপাদন বাড়িয়েছে। দেশি ব্র্যান্ডের মাঝে রয়েছে ওয়ালটন, মিয়াকো ও আরএফএল।

দেশি চুলার দরদাম:

ওয়ালটনের গ্যাসের চুলার মূল্য:
ওয়ালটনের গ্যাসের চুলার মধ্যে রয়েছে, সিঙ্গেল বার্নার, ডাবল বার্নার, গ্লাস টপ সিঙ্গেল বার্নার, গ্লাস টপ ডাবল বার্নার। সিঙ্গেল বার্নারের চুলা ১৪০০- ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ডাবল বার্নারের চুলা ২১০০- ৫৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।

গ্লাস টপ সিঙ্গেল বার্নারের চুলা ২২০০- ২৮০০ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। আর গ্লাস টপ ডাবল বার্নারের চুলা বিকিকিনি হয় ৩৫০০- ৬৫০০ টাকায়। এসব চুলার বডি গ্লাস কিংবা মার্বেল পাথরের উপর দাম নির্ভর করে।

ওয়ালটন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের চুলা

আরএফএল ও ভিশন গ্যাসের চুলার মূল্য:

দেশীয় কোম্পানি আরএফএল ও ভিশন র রয়েছে হরেক রকম গ্যাসের চুলা। কয়েকটি শ্রেণিতে এসব চুলার নাম করণ করা হয়েছে। যেমন : টপার গ্যাস স্টোভ, অটো গ্যাস স্টোভ ও নন অটো গ্যাস স্টোভ ও আরএফএল গ্যাস স্টোভ।

এসব চুলার বডি আয়রন থেকে নিয়ে স্টীল ও গ্লাসেরও রয়েছে। ক্যাস্ট আয়রন কিংবা গালভানাইজড আয়রন দিয়ে তৈরি ওয়ান বার্নার ও টু বার্নারের স্টিলের চুলা ১৫০০-২০০০ টাকা ও ৩০০-৩৫০০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

ওয়ান বার্নারের গ্লাসের চুলা ২২০০-২৫০০ টাকার মধ্যে ও গ্লাসের তৈরি টু বার্নারের চুলা ৩০০০-৮০০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। মিয়াকো কোম্পানির গ্যাসের চুলার মূল্যও প্রায় একই রকম দামে বিক্রি হয়।

গাজী গ্যাসের চুলার মূল্য:

বাংলাদেশী  গাজী ব্রান্ড-এর রয়েছে নিজেশ্ব মান নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি। তারা বাজারে  সিঙ্গেল বার্নার, ডাবল বার্নার, গ্লাস টপ সিঙ্গেল বার্নার, গ্লাস টপ ডাবল বার্নারের চুলা গুনগত মান ব্যবহারের উপযোগিতা স্টিল, মার্বেল, গ্লাস ইত্যাদি রকমফেরে ১৪০০- ৩৫০০ থেকে শুরু করে ২৬ হাজার ২৭ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়।

ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টি:

এখন প্রায় বেশিরভাগ ব্র্যান্ডের চুলাতে বিক্রয়োত্তর ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি কিংবা গ্যারান্টি প্রদান করে থাকে। আর সাধারণ অটোচুলাগুলোতে থাকে নির্দিষ্ট মেয়াদে বিক্রয়োত্তর সেবা।

তাছাড়া হার্ডওয়ার দোকানগুলোতে চুলার সব ধরনের মেরামতের ব্যবস্থা থাকে। চুলার সুইচ, বার্নার ও কানেক্টর নাট এসব কিনে এনে আপনি নিজেও ঠিক করে নিতে পারেন। চুলার সুইচ এবং কানেকটর নাটের দাম পড়বে ১০০-২৫০ টাকা।

যেখানে পাবেন:

ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব জেলা শহর কিংবা উপজেলা সমূহে দেশী ও বিদেশী গ্যাসের চুলার বিভিন্ন ব্যান্ড শপ রয়েছে। এছাড়াও  হার্ডওয়ার দোকানে, হাড়িপাতিল বিক্রির দোকানে ও সুপারশপে চুলা কেনা যাবে এবং চুলা মেরামতেরও সব কিছু পেয়ে যাবেন।

তবে যদি দেখে শুনে কিনতে চান তাহলে ঢাকার মধ্যে যেতে পারেন, গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট, বায়তুল মোকারাম মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি মার্কেট লেভেল ছয়, গুলশান ডিসিসি সুপার মার্কেট ১ ও ২, মিরপুর ১০ ও উত্তরা।