মিডিয়া অঙ্গনে তোলপাড়, টিভিতে খবর পড়ল রোবট লিসা

এতোদিন টেলিভিশনে ক্যামেরার সামনে বসে খবর উপস্থাপন করতেন রক্ত মাংসের মানুষ। তবে এবার সেই প্রথা ভাঙল ভারতের ওড়িশার একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট খবরের চ্যানেল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সংবাদ উপস্থাপনায় বিপ্লব আনল ওড়িশার পুরাতন টিভি চ্যানেল ওটিভি।

লিসা নামের ওই রোবটকে দেখা গেছে টিভির পর্দায়। ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিউজ অ্যাঙকরকে সামনে আনা হয়। টেলিভিশনটির এই পদক্ষেপ ঘিরে মিডিয়া অঙ্গনজুড়ে হইচই শুরু হয়ে গেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত লিসা খবর পরিবেশন করে টেলিভিশনটিতে। এখন থেকে দিনের একাধিক সময় খবর পড়ে শোনাবে লিসা। রোবট লিসাকে দেখে বুঝার উপায় ছিল না যে এটি রোবট। এটি দেখতে হুবহু মানুষের মতোই।

সংবাদ পরিবেশিকা লিসাকে একটি হ্যাণ্ডলুমের শাড়ি ও মেরুন রঙের ব্লাউজে দেখা যায়। শুধু ওড়িশা ভাষায় নয়, একইসঙ্গে ইংরেজিতেও বেশ স্বচ্ছন্দ লিসা।

এই রোবট উদ্বোধনের দিন গলার আওয়াজের মধ্যেই অবশ্য ধরা পড়ছিল কিছুটা যান্ত্রিকভাব। তারপরও উপস্থিত দর্শকদের রীতিমতো চমকে দেয় রোবটের কথা বলার ধরন থেকে সব কিছু।

নিউজ অ্যাঙ্কর লিসাকে সকলের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন চ্যানেলটির কর্ণধার। ওড়িশা টেলিভিশন লিমিটেডের (ওটিভি) অন্যতম কর্ণধার জাগি মাঙ্গত পণ্ডা বলেন, একটা সময় ছিল যখন কম্পিউটার একটি আশ্চর্যজনক জিনিস ছিল। তবে সময় বদলেছে, আজকাল মানুষ ইন্টারনেটেই বেশি সময় ব্যয় করছেন। সবসময় সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করেছে ওটিভি।

রোবট লিসার আগের অবস্থা ও বর্তমান অবস্থা

টেলিভিশন সম্প্রচারে এআই-এর ব্যবহার কেবল শুরু হয়েছে। সেই কারণে এআই নিউজ অ্যাঙ্কর লিসার মাধ্যনে নতুন মাইলফলক তৈরি হবে। লিসা ফ্রি-টু-এয়ার আঞ্চলিক টেলিভিশন সম্প্রচারের দুনিয়ায় প্রথম এআই অ্যাঙ্কর। সেই সাথে প্রথম ওড়িশার এআই নিউজ অ্যাঙ্কর বলে দাবি করেন মাঙ্গত।

মাঙ্গত পণ্ডা আরও বলেন, লিসার অনেক ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা রয়েছে। আপাতত ওটিভি নেটওয়ার্কের টেলিভিশন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জন্য শুধুমাত্র ওড়িশা ও ইংরেজিতে সংবাদ উপস্থাপন করবে।

আগামী দিনে লিসাকে আরও দক্ষ করে তোলার চেষ্টা চলছে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, শুধু টিভির পর্দাতেই নয়, এরপর ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও দেখা যাবে লিসাকে।

ইতোমধ্যে ইংরেজিতে সড়গড় লিসা, তবে ওড়িয়া শিখতে আরও ক’দিন সময় লাগবে। দুই ভাষা রপ্ত করতে পারলেই তাকে চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যাবে।

বলে রাখা দরকার, জনপ্রিয়তা বাড়ছে চ্যাট জিপিটি’র মতো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুলের। আগামী দিনে কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করে কোন কোন ক্ষেত্রে বিপ্লব আসবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। শুধুমাত্র প্রযুক্তি সংক্রান্ত চাকরির ক্ষেত্রে নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ভবিষ্যতে ছড়ি ঘোরাতে পারে এআই।

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ওপেন এআই শুরু করেছিল তাদের টুল চ্যাট জিপিটি। এরপর চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়েছে গুগল বার্ড ও মাইক্রোসফট বিং। বিগত কয়েক মাসে এই তিনটি এআই টুল নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি সংক্রান্ত কর্মক্ষেত্রে মানুষের কাজ করে দিতে পারবে এসব এআই টুলস। যা মানুষের কাজকে আরও গতিশীল করবে বলেও মনে করেন তারা।