শিশু

শিশুর খাবারে অনীহা মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে : গবেষণা

অনেক শিশুই ঠিকমতো খায় না। এ নিয়ে চিন্তায় থাকেন মা-বাবা। তবে আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য। শুধু খাওয়ার অভ্যাস নয়, খাবারে অনীহার কারণে শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটতে পারে।

বিশেষ করে যেসব শিশু রেস্ট্রিকটিভ ইটিং ডিজঅর্ডার (Restrictive Eating Disorder) অর্থাৎ খাবার খেতে না চাওয়ার মতো মানসিক সমস্যায় ভোগে। তাদের মস্তিষ্কে স্বাভাবিকের তুলনায় গঠনগত পার্থক্য দেখা গেছে।

একদল গবেষক ১৩ বছরের কম বয়সী ১৭৪ জন শিশুর মস্তিষ্কের এমআরআই (MRI) বিশ্লেষণ করেছেন। এই গবেষণায় অংশ নেওয়া শিশুরা খাওয়ার সমস্যাজনিত মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল। পাশাপাশি ১১৬ জন সুস্থ শিশুর মস্তিষ্কের স্ক্যানের সঙ্গে এ তুলনা করা হয়।

গবেষণার লক্ষ্য ছিল খাদ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন মানসিক সমস্যার পার্থক্য খুঁজে বের করা। আর এই সমস্যাগুলোর সঙ্গে অটিজম (OCD-Obsessive Compulsive Disorder) এর মতো অন্যান্য স্নায়বিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে কি না তা বোঝা।

খেতে না চাওয়ার মতো মানসিক সমস্যায় ভোগা শিশুর মস্তিষ্কে স্বাভাবিকের তুলনায় গঠনগত পার্থক্য দেখা দেয়, ছবি : ইডফা

গবেষণায় দেখা যায় অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা (Anorexia Nervosa)-তে আক্রান্ত শিশুর মস্তিষ্কের বাইরের স্তরকে কর্টেক্স বলা হয়। এই কর্টেক্স পাতলা হয়ে যায়। একই সঙ্গে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বা মস্তিষ্কের তরল বাড়ে।

আরো পড়ুন : শিশুদের মনোযোগ বাড়ায় যে ৫ খাবার

অন্যদিকে এআরএফআইডি (ARFID- Avoidant/Restrictive Food Intake Disorder) এ আক্রান্ত অপুষ্ট শিশুদের মস্তিষ্কের আয়তন ও পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল কমে যায়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অ্যানোরেক্সিয়া আক্রান্ত শিশুদের মস্তিষ্কের পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের শরীরের ওজন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। অর্থাৎ বেশি সময় ধরে না খেলে শিশুদের মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

গবেষকরা আরো কিছু মিল খুঁজে পেয়েছেন। অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা ও অটিজমে আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কে বেশ কিছু মিল আছে। আবার এআরএফআইডি ও অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মাঝেও কিছু মিল পাওয়া গেছে।

তবে আশ্চর্যজনকভাবে আগের অনেক গবেষণার বিপরীতে এবার অ্যানোরেক্সিয়া ও অটিজম বা রেস্ট্রিকটিভ ইটিং ডিজঅর্ডার ও মনোযোগের অভাব (ADHD) এর মধ্যে তেমন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

গবেষকদের মতে, ‘মানসিক রোগগুলো কেবল খাবার বা শরীরের ওজনের কারণে হয় না। এর পেছনে থাকতে পারে কিছু স্নায়বিক বা জিনগত কারণ।’

ইটিং ডিজঅর্ডার, অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা শুধু মানসিক নয় শারীরিক জটিলতায়ও পরিণত হচ্ছে, ছবি : এডক্যাটালগ

চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ বার্তা
গবেষণাটি চিকিৎসকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে এসেছে। অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা ও রেস্ট্রিকটিভ ইটিং ডিজঅর্ডার এক নয়। এগুলো মস্তিষ্কে আলাদা ধরনের প্রভাব পড়ে। তাই চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা হওয়া দরকার।

আরো পড়ুন : সাদাদের চেয়ে কালোরা বেশি ও কম বয়সে স্ট্রোক করে

বর্তমানে এই ধরণের মানসিক সমস্যার জন্য যা ব্যবহার করা হয় তারমধ্যে খাদ্যভিত্তিক থেরাপি ও কগনিটিভ বিহেইবিওরাল থেরাপি (CBT-Cognitive Behavioral Therapy)। যা শিশুদের মানসিকভাবে খাবারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে সাহায্য করে।

গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে গবেষণা করে দেখা দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মস্তিষ্কের পরিবর্তনগুলো কীভাবে ঘটে এবং সেগুলো প্রতিরোধ বা প্রতিকার সম্ভব কি না।

আমরা সবসময় বলি শিশু ঠিকমতো খাচ্ছে না। তাকে বকাঝকা করি, জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। কিন্তু হয়তো তার খারাপ খাওয়ার অভ্যাসের পেছনে গভীর মানসিক বা স্নায়বিক কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে।

এই নতুন গবেষণা আমাদের জানাচ্ছে খাদ্যাভ্যাস আর মস্তিষ্কের বিকাশ একসঙ্গে চলে। তাই শিশুর খাওয়ার অভ্যাসকে শুধু জেদ বা অভ্যাস ভেবে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।

বরং সচেতন হয়ে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সময়মতো সহায়তা পেলে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ দুটোই ঠিক পথে এগোবে।

সূত্র : নেচার জার্নাল ও  সাইন্স এ্যালার্ট