নেদারল্যান্ডসে ভুয়া বরিস জনসন

মাঝরাস্তায় পড়ে ছিল একটি গাড়ি। চালকের পাত্তা নেই। পুলিশ গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে তল্লাশি চালায়, যদি মালিক বা চালকের কোনো খোঁজ মেলে। খুঁজতে খুঁজতেই বেরিয়ে আসে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স।

লাইসেন্স দেখে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। লাইসেন্সটি বরিস জনসনের। ছবিও ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীরই। এমনকি জন্মদিনও মিলে যাচ্ছে! তবে বেশিক্ষণ পুলিশকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি।

দেখা যায়, লাইসেন্সটির মেয়াদ শেষের সাল ৩০০০। পরে অবশ্য গাড়ির মালিককে খুঁজে পায় পুলিশ। তাকে মদ্য অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজব এ ঘটনাটি ঘটেছে নেদারল্যান্ডসে।

ডাচ পুলিশ জানায়, ৩০ এপ্রিল (রোববার) মধ্যরাতে পুলিশ একটি গাড়ি দুর্ঘটনার খবর পায়। জানা যায়, একটি গাড়ি সজোরে ধাক্কা মেরেছে লোহার স্তম্ভে। পুলিশ পৌঁছে দেখে মাঝরাস্তার ওপর থমকে থাকা গাড়িতে কেউ নেই।

কার গাড়ি খুঁজতে পুলিশ গাড়ির ভেতরে তল্লাশি চালাতে শুরু করে। বের হয় একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স। তা দেখেই ঘাবড়ে যায় পুলিশ। কারণ লাইসেন্সে নাম লেখা বরিস জনসন। ছবিও ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীরই। এমনকি জন্মদিনটিও বরিসেরই।

তাহলে কি ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডসে এসে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লেন। শুরু হয় তন্ন তন্ন করে তল্লাশি। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ির মালিককে পাওয়া যায়।

তিনি দুর্ঘটনার পর মত্ত অবস্থায় গাড়ি ছেড়ে একটি সেতুর ওপর গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি আদতে ইউক্রেনের বাসিন্দা।

পুলিশের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যখন ওই ব্যক্তিকে ধরি তখন তিনি নিজে থেকে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। নিজেকেও চিনতে পারছিলেন না। মদ খেয়ে আছেন কি না নিশ্চিত হতে আমরা পরীক্ষা করতে চাই।

কিন্তু তিনি তা নাকচ করে দেন। সবচেয়ে আজব ব্যাপার হলো, ড্রাইভিং লাইসেন্সটির মেয়াদপূর্তির দিন হিসেবে লেখা ছিল ৩০০০ সাল। তা দেখেই পুলিশের সন্দেহ দৃঢ় হয়, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ঘুরছেন তিনি। কারণ এত বছরের মেয়াদ কোনো লাইসেন্সেই থাকে না।’

কোথা থেকে এলো ভুয়া লাইসেন্স—ডাচ পুলিশ তার সন্ধান করছে। এরই মধ্যে এনওএসের সাবেক সাংবাদিক কিসিয়া হেকস্টার দাবি করেছেন, ইউক্রেনের দোকানে দোকানে ভুয়া লাইসেন্স বিক্রি হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিও ইউক্রেনেরই বাসিন্দা।

পুলিশের মুখপাত্রকে যখন প্রশ্ন করা হয়, সত্যিই যদি বরিস জনসন স্টিয়ারিংয়ে থাকতেন, তখন কী করতেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যত দূর জানি, বরিস জনসন এই সময়ে নেদারল্যান্ডসে নেই।’

বরিস জনসন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য সরকারের সংকটের সময় ৭ জুলাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাড়ান।

২০১৫ সাল থেকে তিনি আক্সব্রিজ ও সাউথ রাইস্লিপের এমপির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত হেনলির এমপি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত লন্ডনের মেয়র ও ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এলোমেলো চুল, ব্যতিক্রমী চাহনী ও ঝাজালো বক্তব্যের জন্য খ্যাতিমান বরিস জনসন। সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীর মাঠে আসা বরিস জনসনের বেড়ে উঠার গল্পও ব্যতিক্রম ছিল।