গত প্রায় বেশ কয়েক বছর ধরে ঈদের ছবি মানেই শাকিব খানের সিনেমা। এবারের ঈদও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ছোটপর্দায় দীর্ঘদিন কাজ করা পরিচালক তপু খান তার প্রথম সিনেমাতেই পেয়েছেন শাকিব খানকে আর সেই সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এই ঈদে।
‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শবনম বুবলী, মিশা সওদাগর, ফখরুল বাশার মাসুম, মিলি বাশার ও আরও অনেকে।
মহল্লার যেকোনো অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া এক যুবক নাফিস ইকবালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই সিনেমার কাহিনী। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ মহল্লাবাসীদেরকে বেশ অনুপ্রেরণা দেয়।
সবার চোখেই সে একজন হিরো ফিগার। ঘটনাচক্রে নাফিসের পরিচয় হয় মিলা চৌধুরীর সাথে। প্রথম দেখায় ভালোলাগা থেকে এরপরে বাংলা সিনেমার চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী ভালোবাসা।
দৃশ্যপটে দরকার ছিল শুধুমাত্র একজন ভিলেনের, সেজন্যই আজমত মিল্লাহর ক্যারেক্টরে মিশা সওদাগরের আগমন। সবশেষে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালনে ভর করে অগ্রসর হয় গল্প।
শাকিব খানের বেশিরভাগ সিনেমাতে শাকিব খানই প্রাণ থাকেন, এই সিনেমাও তার ব্যতিক্রম নয়। সিনেমাতে তার এন্ট্রি দৃশ্য থেকে শুরু করে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত তিনি ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত।
আরো পড়ুন: সামাজিক মাধ্যমে শাকিব খান বন্দনা
সিনেমার শাকিব খানকে দেখলে বোঝার বিন্দুমাত্র উপায় নেই যে তার ব্যক্তিজীবনে এতো ঝড়ঝাপটা বয়ে যাচ্ছে। সিনেমাতে বেশ কিছু সামাজিক ইস্যু নিয়ে আসা হয়েছে যা কিনা শাকিব খানের অন্যান্য সিনেমায় নিকট ভবিষ্যতে দেখা যায়নি।
গানগুলো সিনেমার অন্যতম প্লাস পয়েন্ট। আলাদা করে বলতেই হয় ‘কথা আছে’ শিরোনামের র্যাপ সংটির কথা। খুব সম্ভবত ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো এরকম একটি গানে শাকিব খান পারফর্ম করলেন এবং বেশ ভালোভাবেই উতরে গেলেন। এই গানের লিরিক্স, গায়কি- সবচেয়ে চমৎকার।
‘সুরমা সুরমা’ গানে শাকিব আর বুবলীকে ভীষণ সুন্দর আর গ্ল্যামারাস লেগেছে। ছোটখাটো বিষয় পরিচালক সুন্দর করে দেখিয়েছেন, যেমন সমাজে কোন সমস্যা হলে সেটা সমাধানের চেয়ে এই যুগে এমন কিছু মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া যারা কীনা সেটা লাইভ করতেই বেশি পছন্দ করে।
সারাক্ষণ লাইভ করা ছেলেটিকে দিয়ে এই ধরনের চরিত্র প্রতিষ্ঠা করাটা বেশ বিনোদন দিয়েছে। সিনেমার মহল্লাকে আসলেই মহল্লা মনে হয়েছে। গল্পের প্রয়োজননে মহল্লাকে যেমনটা কর্দমাক্ত, ময়লায় ভরপুর দেখানোর দরকার ছিল, তেমনটাই দেখানো হয়েছে আর সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
মিশা সওদাগর অন্যান্য সিনেমাতে যেমনটা করেন, তেমনই করেছেন তবে দর্শকদের তিনি বরাবরের মতই বেশ বিনোদন দিয়েছেন।
অনেক বেশি সামাজিক ইস্যু দেখাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আসলে কোন গল্পে বা ইস্যুতে বেশি জোর দেবেন, সেই জায়গায় পরিচালক তপু খান তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন বলে মনে হয়েছে।
নাইন্টিজের বেশিরভাগ কমার্শিয়াল বাংলা সিনেমার মত এই সিনেমাতেও নায়কের সাথে দুইজন সাইড ক্যারেক্টর বা চ্যালাটাইপ অভিনেতা আছেন, নায়িকার সাথেও সেটা আছে।
এদের নামও বেশ অদ্ভুত- বাম্পার, টেম্পার আর মাইকেল, জ্যাকসন। এখনও এই ধরনের ক্যারেক্টরের কোন দরকার আছে কিনা বা দরকার না থাকলেও কোন উদ্দেশ্যে সিনেমাতে নেয়া হয়, সেই প্রশ্ন রেখে গেলাম।
শুধু তাই না, শাকিব খানের ভাই কিংবা বোনের ক্যারেক্টারগুলোকেও খুব একটা ডেভালপ করা হয়নি। শাকিব খান অভিনীত চরিত্রের নাম একবার বলা হচ্ছে নাফিস, একবার নাফিজ। সিনেমাতে শাকিব খান যে জুতোজোড়া পরে এন্ট্রি নিয়েছেন, সিনেমার অন্য অনেক দৃশ্যেই তাকে সেই একই জোড়া জুতা পরতে দেখা গেছে।
এখনও সেই নাইন্টিজের সিনেমার মত, নায়িকা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা মানেই তিনি এক অর্থে ‘বড়লোকের বখে যাওয়া’ মেয়ে হবেন, নায়ক এসে তাকে শিক্ষা দেবেন আর এরপরেই নায়িকা শাড়ি পরে ‘নারী’তে রূপান্তরিত হবেন- এই ধরনের অদ্ভুত সেকেলে মনোবৃত্তি পরিচালকেরা কেন সিনেমাতে দেখান আর কেনই বা সেইসব দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য অভিনেতারা রাজি হন, তা এক বিরাট প্রশ্ন।
শাকিব খানের মূল যে দর্শকরা, তাদের কাছে এইসব দৃশ্যের মাধ্যমে ভুল দৃশ্য যাওয়ার বেশ ভালোরকমের সম্ভাবনা আছে।
সিনেমার সেকেন্ড হাফ তুলনামূলক বেটার হলেও সেখানে বুবলী ছিলেন একদম শো পিস হিসেবেই। সমাজের বেশিরভাগ অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠে যাবতীয় দুরবস্থার জন্য শাকিব খান যেভাবে সাধারণ জনগণকেই এক অর্থে দায়ী করেন, সেটা কিছুটা চোখে লাগে আর মনে হয় পরিচালক সেফ খেলতে চেয়েছেন।
জনগণের অবশ্যই দোষ রয়েছে তবে সেখানে সরকারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকলে সেটাকেও উল্লেখ করার মতো সৎসাহস আমাদের সিনেমাতে সেভাবে এখন আর দেখা যায় না। যতটা সহজে সিনেমার শেষে জনগণ জেগে উঠে শাকিব খানের ডাকে, ততটা সহজে বাস্তবের জনগণ কখনও জেগে উঠবে কি?
ফ্যামিলি নিয়ে মোটামুটি এঞ্জয়েবল, টাইমপাস একটি সিনেমা দেখতে চাইলে আপনি ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ একবার দেখতেই পারেন।
নায়ক শাকিব খান ও নায়িকা বুবলীর ব্যক্তিগত রেষারেষির প্রভাব এই সিনেমার ‘সুরমা সুরমা’ গানে পড়েছে বলে সিনেমার দুই সপ্তাহ পর নিজেই জানিয়েছেন শাকিব খান।
তার দাবি, রোমান্টিক ঘরানার যত সিনেমায় তিনি গানের স্যুটিং তিনি করে থাকেন এই বুবলীর সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে কারণে তার ফুটে উঠেনি।