রবীন্দ্রনাথের গল্পে নির্মিত সিনেমাগুলো

বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ঋণ। বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদ পুরুষকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করছেন নানা অঙ্গনের মানুষ।

শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমের মতোই উপমহাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধারা অনেকটা প্রভাবিত। হিন্দি, বাংলা-নানা ভাষায় নির্মিত হয়েছে তাঁর সাহিত্য নিয়ে চলচ্চিত্র। হয়েছে প্রশংসিত, নন্দিত।

চলুন দেখে নেয়া যাক রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে নির্মিত নন্দিত ৫ সিনেমা।

ঘরে-বাইরে:

রবীন্দ্রনাথের ঘরে-বাইরে উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয় ‘ঘরে বাইরে’ সিনেমাটি। এটি মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত এ সিনেমায় দুই আবাল্য সুহৃদ সন্দীপ ও নিখিলেশের সম্পর্কের টানাপোড়ন সার্থকভাবে রূপায়িত হয় রুপালি পর্দায়।

নিখিলেশের স্ত্রী বিমলার প্রতি সন্দীপের আকর্ষণ, তাদের প্রেম আর ইংরেজবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের মতো অতি সূক্ষ্মাতিসুক্ষ বিষয় উঠে আসে উপন্যাসে।

বিমলা চরিত্রে ছিলেন স্বাতীলেখা চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপের ভূমিকায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং নিখিলেশ ছিলেন ভিক্টর ব্যানার্জি। সত্যজিৎ রায় ১৯৪০-এর দশকে তাঁর প্রথম ছবি পথের পাঁচালি নির্মাণেরও আগে এই ছবির চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন।

এই সিনেমার বিষয়বস্তু নারীমুক্তি, যা সত্যজিতের বহু ছবিতে বহু ভাবে উঠে এসেছে। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মাননা পায় ‘ঘরে-বাইরে’।

ছবিটি ১৯৮৪ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাম ডি’অর-এর জন্য প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে দেখানো হয়। রবীন্দ্রনাথের ঘরে-বাইরে উপন্যাসটিও পাঠক মনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।

চোখের বালি:

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য নিয়ে যতগুলো সিনেমা নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রশংসিত ‘চোখের বালি’ সিনেমাটি। একই নামের উপন্যাসকে ভিত্তি করে চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন অনেক নির্মাতা।

সর্বপ্রথম এই উপন্যাস নিয়ে ১৯৩৮ সালে সিনেমা নির্মাণ হয়। সতু সেন পরিচালিত সে সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সুপ্রভা মুখোপাধ্যায়, ইন্দিরা রায়, শান্তিলতা ঘোষ, রমা বন্দ্যোপাধ্যায়, হরেন মুখোপাধ্যায়, ছবি বিশ্বাস, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যরা।

এরপর ২০০৩ ‘চোখের বালি’ নির্মাণ করেছেন প্রয়াত নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষ। এতে অভিনয় করেন ঢালিউড সুপার স্টার ঐশ্বরিয়া রাই, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন, টোটা রায়চৌধুরী, লিলি চক্রবর্তী গংরা।

বিনোদিনী নামের এক বিধবার মানসিক অবস্থাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে চলচ্চিত্রের কাহিনী। দুই বিধবার মধ্যকার বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক নিয়ে সিনেমায় নতুন মাত্রা যোগ হয়।

ঐশ্বরিয়া এখানে ‘বিনোদিনী’ ও রাইমা সেন ‘আশালতা’ চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রসেনজিতের অভিনয়ও দ্রুতি ছড়িয়েছে।

চারুলতা:

সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘চারুলতা’ রবীন্দ্র সাহিত্যে নির্মিত অত্যন্ত জনপ্রিয় সিনেমা। চারুলতা চলচ্চিত্রটির কাহিনী নেয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়’ গল্প থেকে।

অবহেলিত এক গৃহবধূর গল্প বলা হয়েছে এতে। যেখানে দেবরের সঙ্গে ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র চারুর এক অব্যক্ত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চলচ্চিত্রটি দেশ বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করে।

এই পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৬৪ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার বেয়ার পুরস্কার, ১৯৬৫ সালে সেরা চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের গোল্ডেন লোটাস পুরস্কার জয় এবং ১৯৬৫ সালে ওসিআইসি পুরস্কার জয়।

সুভা:

২০০৫ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ‘সুভা’ অবলম্বনে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেন ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খান ও চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা।

‘সুভা’ চরিত্রে বাক্প্রতিবন্ধী মেয়ের ভূমিকায় পূর্ণিমার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল সর্বমহলে। শাকিব খানের অভিনয়ও নজর কেড়েছিল সমালোচকদের।

ইমন সাহার সংগীত পরিচালনায় বাপ্পা মজুমদারে কণ্ঠে ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে’ গানটিও ছিল চমৎকার। এছাড়া সহশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন সুজাতা, তুষার খান, সালেহ আহমেদ গংরা।

অবুঝ বউ:

নারগিস আখতার পরিচালিত ছবি ‘অবুঝ বউ’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। রবীন্দ্রনাথের ‘সমাপ্তি’ ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ববিতা, ফেরদৌস, শাকিল খান ও নিপুণ।

চলচ্চিত্রটি ৩৫ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। এ সিনেমার জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জেতেন নারগিস আখতার।

এ ছাড়া সংগীতায়োজক হিসেবে পুরস্কৃত হন সুজেয় শ্যাম। সেরা সম্পাদনা বিভাগেও পুরস্কৃত হয় ছবিটি। অবুঝ বউ নির্মাণ করে নতুন করে আলোচনায় আসেন পরিচালক নারগিস আখতার।