ঢাকা থেকে যেভাবে বিলুপ্ত হল ‘ভিস্তিওয়ালা’

প্রাচীন পেশা ‘ভিস্তিওয়ালা’ ঢাকা থেকে বিলুপ্ত হওয়ার কাহিনী জানবো এই নিবন্ধে। ১৮৭৮ সালে ঢাকা শহরে আধুনিক সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়। এর আগে খাবার পানির উৎস ছিল পুকুর, কুয়া ও নদী ইত্যাদি।

সে সময় কিছু লোক টাকার বিনিময়ে চামড়ার ব্যাগে করে ঢাকা শহরের বাসায় বাসায় খাবার পানি পৌঁছে দিতেন। এই চামরার ব্যাগকে মশ বলা হতো। এ ধরনের পেশাজীবীদের বলা হতো ‘ভিস্তিওয়ালা’ বা ‘সুক্কা’। ‘ভিস্তি আবে ভিস্তি’ এমন হাঁক দিয়ে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি সরবরাহ করতেন।

অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ঢাকায় সুপেয় পানির স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না। তখনকার ঢাকা জেলা কালেক্টরকে সুপেয় পানির জন্য ১৫০ রুপি বরাদ্দ দেয়া হতো। অথচ মাত্র দুই রুপিতেই সে সময় চাল পাওয়া যেত।

কুয়া থেকে পানি উত্তোলন করছে নগরবাসী

স্বাস্থ্যসম্মত পানির অভাবের জন্যই এতো বিপুল অর্থ সে সময় বরাদ্দ দেওয়া হতো। কারণ সে সময় সুপেয় পানির অভাবে কলেরার প্রাদুর্ভাব ছিল বেশি।

অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের “ঢাকা সমগ্র” গ্রন্থে বলা হয়েছে, ১৮৭১ সালে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ঢাকাবাসীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কাজ চলে খু্বই ধীর গতিতে।

ভিস্তিওয়ালারা আজও আছেন কলকাতায়

নবাব আবদুল গণি ও তার ছেলে খাজা আহসান উল্লাহ সম্মিলিতভাবে সুপেয় পানির ব্যবস্থাপনায় তৎকালীন এক লাখ টাকা দান করেন। নগরবাসীর উপর করের বোঝা দেওয়া হবে না এই শর্তে নবাব আবদুল গণি টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতায় আটকে যায় সে কাজ।

এক সময় খাবার পানির সবচেয়ে বড় উৎস ছিল নদী
পরে ১৮৭৪ সালের আগস্ট মাসে রাজ প্রতিনিধি লর্ড নর্থব্রুক ঢাকায় ওয়াটার ওয়ার্কসের ভিত্তি স্থাপন করেন। ধীরগতিতে এই প্রকল্পের কাজ চলছিল। আর এক সময় পৌরসভার টাকা শেষ হলেও প্রকল্পের কাজ তখনও শেষ হয়নি।

পরে সরকার বাধ্য হয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য আরও ৯৫ হাজার ৩৫০ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অবশেষে ১৮৭৮ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এই প্রকল্প থেকে দৈনিক পানি সরবরাহের ক্ষমতা ছিল দুই লাখ গ্যালন।

১৯৬৩ সালে ঢাকায় ‘ওয়াসা’ নির্মাণের ফলে সুপেয় পানির অভাব ঘুঁচে 

এর মাধ্যমে ঢাকায় প্রথমবারের মতো বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে ঢাকায় ‘ওয়াসা’ নির্মাণের ফলে সুপেয় পানির আর অভাব রইল না। এতে নগরবাসীর সুপেয় পানিসহ স্বাস্থ্যসম্মত পানির অভাব ঘুচে যায়।

ষাটের দশক পর্যন্ত মোটামুটি দাপটের সাথেই ভিস্তিওয়ালারা ঢাকায় পানি সরবরাহের কাজ করেন। ইতিহাসের বিভিন্ন বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৮ সালের পর থেকেই মূলত ঢাকায় ধীরে ধীরে এই ভিস্তিওয়ালা পেশাজীবীদের অস্তিত্ব বিলীন হতে থাকে।
তথ্য: জান্নাতুল তানভী।