সময় তখন ১৯৬৩ সাল। বর্তমান দুনিয়ার আলোচিত ব্যক্তি বিল গেটস এর বয়স তখন মাত্র আট বছর। তার মা স্কুল শিক্ষিকা মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস তাঁকে তিনটি উপদেশ দিলেন।
তখন কেউ চিন্তাও করেনি এই তিনটি উপদেশ কীভাবে বিল গেটসের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হবে একদিন, বিপ্লব বয়ে আনবে পৃথিবীজুড়ে, স্রোতের বাইরে গিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শেখাবে কোটি কোটি মানুষকে।
শিশু বিল গেটসকে দেয়া মায়ের তিনটি উপদেশ হচ্ছে-
এক, প্রচুর বই পড়বে। ক্লাসের পড়ার বাইরেও বিশাল একটি জগত রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে বেশি করে জানবে, বেশি করে পড়বে। আর নতুন নতুন সব বিষয়ের বই পড়বে, যেগুলো সচরাচর অন্যরা পড়ে না
দুই, তুমি যেমন চিন্তা করবে, তোমার জীবন সেভাবেই গড়ে উঠবে। তাই সবসময় স্রোতের বাইরে চিন্তা করবে। সবার মতো হুজুগের পেছনে ছুটবে না। কখনো ছোট চিন্তা করবে না। অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখবে, এতো বড় যেন নিজের কাছেই অসম্ভব লাগে, অন্যদের কাছে সে স্বপ্নের কথা বলতে ভয় হয়।
তিন, জীবনে এমন কাজ করবে যা অন্য কেউ করছে না। বেশিরভাগ মানুষ ঘুরেফিরে প্রতিষ্ঠিত কিছু পথেই ক্যারিয়ার গড়ে তোলে, কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। তুমি সবার চেয়ে ভিন্ন পথে হাঁটবে, ভিন্ন কাজ করবে। তুমি নিজেই পথ তৈরি করবে, মানুষকে স্বপ্ন দেখাবে।
পরবর্তীতে বিল গেটস তাঁর সাফল্যের রহস্য হিসেবে এই বই পড়ার অভ্যাসকেই তুলে ধরেন। কারণ পৃথিবী এতো দ্রুত বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত যে, জ্ঞানের দখলে অন্যদের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে না রাখলে টিকে থাকা অসম্ভব। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে অনেকে ভুল করে। তারা প্রচুর বই পড়ে, কিন্তু সেখান থেকে শেখার জিনিস খুব কমই থাকে।
বিল গেটস শুধু যে প্রচুর বই পড়েন তাই নয়, সেগুলো নিয়ে তাঁর মতামত, অনুভূতি, কী কী শিখলেন ইত্যাদি নিয়ে তাঁর একটি ব্লগও আছে।
বিল গেটস এর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অনেকেই গণ্ডিবদ্ধ কিছু চিন্তাভাবনায় আটকা পড়ে থাকলেও তিনি স্রোতের বাইরে গিয়ে মাইক্রোসফট আবিস্কার করেন, যা পরবতীতে পৃথিবীজুড়ে আলোড়ন তৈরি করে।
মায়ের তৃতীয় উপদেশটিও বিল গেটস মেনে চলতেন। সবাই ঘুরেফিরে একই কাজ করলেও বৃত্তের বাইরে যান গেটস।
ভিন্নপথে, নিজের স্বপ্নের পথে হাঁটতে চাওয়ার ঝুঁকি অনেক, তাই পরিশ্রমও করতে হবে আর সবার চেয়ে বেশি, কিন্তু একবার সাফল্যের দেখা পেয়ে গেলে যেই তৃপ্তি, যেই গৌরব অনুভব করবে, তার সাথে পৃথিবীর আর কোনকিছুর তুলনা হয় না।
বিল গেটসকে চেনেন না এমন লোক ডিজিটাল দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বহুল আলোচিত হার্ভার্ড ড্রপআউট, মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বনন্দিত জনহিতৈষী তিনি।
মাইক্রোসফটের এই সহপ্রতিষ্ঠাতার বর্তমান সম্পদের মূল্য ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর বেশি। দাতব্য কাজে সম্পদ দান করাসহ নানা জটিলতায় তার সম্পদ কমেছে। তবুও সমাজসেবার কাজে বেশি সময় দিচ্ছেন এ ধনকুবের।