বেলাল মসজিদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব

ইসলামের সূচনাকালে মক্কার কাফের মোশরেকদের হাতে যে সব নওমুসলিম কৃতদাস হিসেবে বন্দি অবস্থায় অকথ্য নির্যাতন ভোগ করছিলেন, তাদের একজন বেলাল (রা.)।

রাসূল্লাহ সা. এর যে কজন প্রিয় সাহাবী ছিলেন তার মধ্যে হযরত বেলাল রা. একজন। ইসলামী ইতিহাসে হযরত বেলাল রা. একটি অন্যতম নাম। তিনি বেলাল হাফশি নামেও পরিচিত।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে চরম অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন হযরত বেলাল। এমন কোনো বর্বর নির্যাতন ছিল না যা তার মনিব উমাইয়া ইবনে খালাফ তাকে দেয়নি। শত নির্যাতনেও তাকে ইসলাম থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি।

রাসূলের নির্দেশে বিপুল অর্থের বিনিময়ে হযরত বেলালকে চরম নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত করেছেন হযরত আবু বকর রা.। হযরত বেলাল মক্কা থেকে মুক্ত হয়ে রাসূলের কাছে মদিনায় হিজরত করেন।

হিজরতের পর মসজিদে নববী নির্মাণ হলে বিশ্ব নবী সা. বেলাল রা. কে মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম মোওয়াজ্জিন। আজান চালুর হওয়ার পর থেকে নিয়মিত হযরত বেলালের সুললিত কণ্ঠে প্রচারিত হতো মসজিদে নববীর সমধুর আজান।

মুসলিম উম্মাহর শিরোমনি ও বিশ্ব জাহানের মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ সা. এর প্রিয় সাহাবী হযরত বেলালের নামে পবিত্র ভূমি মদিনা মুনওয়ারায়িএকটি মসজিদ রয়েছে। যা মসজিদে বেলাল রা. বা বেলাল মসজিদ নামে পরিচিত।

বেলাল মসজিদ সৌদি আরবের মদীনায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি মসজিদ। রাসূলের হাতে গড়া মসজিদে নববীর দক্ষিণ পাশেই এর অবস্থান। মসজিদে নববী থেকে মাত্র ৫ মিনিটেই জান্নাতুল বাকির সীমানা দিয়ে পায়ে হেঁটে বেলাল মসজিদে যাওয়া যায়।

প্রাঙ্গণ সহ বেলাল মসজিদ

তিন তলাবিশিষ্ট বেলাল মসজিদের নিচতলার পুরোটাই মার্কেট। এখানে ছোট শিশুদের নানান রকম খেলনা পাওয়া যায়। রয়েছে বোরকা ও বাহারি ডিজাইনের চুরি নেকলেস আংটি চেইন বেসলেটসহ সব ধরনের স্বর্ণালঙ্কার।

এছাড়াও জায়নামাজ তসবিসহ অন্য সব পণ্যও পাওয়া যায় বেলাল মসজিদের মার্কেটে।

ভেতরের মার্কেট ছাড়াও বেলাল মসজিদের বাইরের প্রাঙ্গণে রয়েছে খোলা বাজার। রাসূলের রওজা মোবারকের অদূরে হওয়ায় মার্কেটটি বেশ জমজমাট থাকে।

দুই তলায় ও তিন তলায় রয়েছে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা দুই তলার ভেতর দিয়েই সিড়ি বেয়ে তিন তলায় যাওয়া যায় আবার বাইরের সিড়ি বেয়েও যাওয়া যায়।

বেলাল মসজিদে নারী-পুরুষের প্রবেশ পথ আলাদা আলাদা। নারীদের নামাজের স্থানে পুরুষদের যাওয়া নিষেধ।

দূর দূরান্ত থেকে ওমরাহ করতে আসা দর্শনার্থীরা বেলাল মসজিদ দেখতে আসেন। এর মধ্যে কেউ সুন্নত কেউ নফল যে যার মতো করে সময় অনুযায়ী নামাজ আদায় করে নেন।

মসজিদের উপরের অংশ সুনিপুণ কারুকাজ করা। যা দেখলে চোখ আটকে থাকে। রয়েছে অনেক বড় বড় ঝাড়বাতি। বাহারি রংয়ের কার্পেট বিছানো রয়েছে মেঝেতে। মসজিদের পরিবেশ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন।

নামাজের স্থানের চারপাশে খাজকাটা তাকে কোরআন শরীফ রাখা আছে। যে কেউ ইচ্ছে করলে কোরআন পাঠ করতে পারে।

পবিত্র ভূমি মদিনায় যারা হজ বা ওমরা করতে আসেন তারা সবাই ইসলামের প্রথম মোয়াজ্জিন বলিষ্ঠ ও সুললীত কণ্ঠের অধিকারী হযরত বেলালের স্মৃতি বিজড়িত এই মসজিদ দেখতে আসেন।

Leave a Reply

%d bloggers like this: