মোগল ইতিহাস মুছে যাচ্ছে ভারতের পাঠ্যবই থেকে

ভারতের দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস অধ্যায়টি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে আরও কয়েকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নিয়ে দেশটিতে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

পাঠ্যক্রম থেকে মুসলিম শাসকদের ইতিহাস সরিয়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টাকে ভারতের ইতিহাস থেকে মোগলদের মুছে ফেলার চেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সংস্থা জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও শিক্ষণ কাউন্সিল বা এনসিইআরটি ভারতের পাঠ্যবই প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তি দিয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে পাঠ্যক্রমের বোঝা কমাতেই এই অধ্যায়টি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বইটিতে এখনও কিছু অধ্যায়ের মধ্যে মোগলদের ইতিহাস উল্লেখ রয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম বিস্তৃত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় মৌর্যদের দ্বারা, যা খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫ অব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল।

মৌর্যদের পতনের পর আবার বড় সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে গুপ্তদের হাত ধরে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের মূল আধিপত্য ছিল উত্তর ভারতে। চতুর্থ শতাব্দীর এই সাম্রাজ্যের পতনের পর বড় আকারের সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় মোগলদের দ্বারা।

জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর যাকে সম্রাট বাবর নামে সবাই চেনে। তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় মোগল সাম্রাজ্যের। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে মোগলরা ভারতে আসেন, দিল্লীর মসনদে সম্রাট বাবর আসীন হন ১৫২১ সালে। তার শাসনের মাধ্যমে শুরু হয় মোগল সাম্রাজ্য। তার মৃত্যুর পর তারই পুত্র হুমায়ূন দিল্লির মসনদে বসেন।

এরপর তার পুত্র আকবর, এরপর জাহাঙ্গীর, তারপর শাহজাহান, এরপর আওরঙ্গজেব যিনি বাদশাহ আলমগীর নামে পরিচিত। বাবর থেকে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত প্রায় আড়াইশো বছরের মোগল শাসনের ইতিহাস রচিত হয়।, যেটি পরবর্তীতে পরিণত হয় ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিস্তৃত সাম্রাজ্যে।

মোগলরা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম শাসক না, সাম্রাজ্য বিস্তারের অন্বেষণে আসা প্রথম বংশও না। তারপরও তাদের হাত ধরে বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মূলে ছিল তুলনামূলক আধুনিক সমরাস্ত্র, আধুনিক শাসনব্যবস্থা ও শাসনের ব্যাপারে স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্মতি তৈরি করতে পারা।

মোগলদের সময়ে অভিজাতদের সমর্থনও ছিল তাদের শাসনের প্রতি, সব ধর্মের যোদ্ধাদের নিয়ে মোগলরা গঠন করে সুশৃঙ্খল সামরিক বাহিনী। কালের আবর্তে পরাক্রমশালী মোগল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে, ভারতীয় উপমহাদেশে শুরু হয় ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসন।

ইতিহাস ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই থেকেও বেশ কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে লেখা ছিল। গান্ধীর হত্যার পরে আরএসএসকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল, সেই অংশটিও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আবার একাদশ শ্রেণির সমাজবিজ্ঞানের বই থেকে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গে দুটি অধ্যায়ও বাদ দেওয়া হয়েছে। এনসিইআরটির ইতিহাস বইয়ে পরিবর্তনের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভারতের প্রায় আড়াইশ নামকরা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ। তথ্যসূত্র: বিবিসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া