পুরো বিশ্বে পান্না এতো জনপ্রিয় কেন?

রত্ন হিসেবে পান্নার জনপ্রিয়তা পুরো বিশ্বে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারেন রতিতে। বড় জোর ১০ থেকে ৩০ গ্রামের মধ্যে ঘোরাফেরা করে তার ওজন।

তবে জাম্বিয়ায় বাঙালি ভূতাত্ত্বিক মানস বন্দ্যোপাধ্যায় যে না-কাটা পান্নাটি আবিষ্কার করেছেন, তার একারই ওজন ১ কেজি ৫০৫ গ্রাম। এর আগে, এত বড় পান্না পাথর আবিষ্কার হয়নি।

আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়ার সবচেয়ে বড় পান্নার খনি কাজেম থেকে ৭ হাজার ৫২৫ ক্যারেটের একটি পান্নাটি উদ্ধার করা হয়েছে। সম্প্রতি এটির নাম গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উঠেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পান্না

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই পান্না অবশ্য গত বছর জুলাই মাসে আবিষ্কার করেছিলেন মানস। তার সঙ্গে ওই পান্না উদ্ধারের কাজ করেছেন রিচার্ড কাপেটা এবং তার দলও। পুরো দলটিকেই কৃতিত্ব দেয়া হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম পান্না আবিষ্কারের।

মানসের আবিষ্কৃত ওই পান্নাটির নাম দেওয়া হয়েছে চিপেমবেল। জাম্বিয়ার স্থানীয় বাম্বা ভাষায় যার অর্থ গণ্ডার। আগেও এই খনি থেকেই আরো দুইটি বড় পান্না আবিষ্কার হয়েছিল।

২০১০ সালে আবিষ্কৃত ১ কেজি ২৪৫ গ্রাম ওজনের পান্নাটির নাম ছিল ইনফোসু, যার অর্থ হাতি। আর ২০১৮ সালে ১ কেজি ১৩১ গ্রাম ওজনের আবিষ্কৃত পান্নার নাম দেয়া হয়েছিল ইনকালামু, যার অর্থ সিংহ।

পান্না পাথর খণ্ডের আংটি

সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া না-কাটা পান্নাটির আকৃতি অনেকটা গণ্ডারের মুখের মতো। এমনকি গণ্ডারের শৃঙ্গের মতো উঁচু অংশও রয়েছে পাথরটিতে। তাই ওই নামকরণ করা হয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো সম্প্রতি আবিস্কার হওয়া গণ্ডার আগের আবিস্কৃত হাতি ও সিংহকে ওজনের দিক দিয়ে ছাপিয়ে গেছে।

পান্নার জনপ্রিয়তা:

পান্না নবরত্নের অন্যতম। বুধ গ্রহের প্রতিনিধিত্ব করে এই মূল্যবান পাথরটি। বুধ গ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্প ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রক গ্রহ। জন্ম ছকে বুধ শক্তিশালী হলে ব্যবসা, যোগাযোগ, বুদ্ধিমত্তা, শিক্ষা ভালো হয়।

অনেকেই শরীরে পান্না ধারণ করে থাকে তবে এই পাথরটি পরলে কী হয় এমন প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকের অজানা।

পান্না সম্পর্কে জ্যোতিষবিদদের ভাষ্য: 

  • পান্না ধারণ করলে মানুষের সঙ্গে যোগোযাগ রাখার দক্ষতা অনেক বেড়ে যায় এবং আত্মবিশ্বাস শিখরে পৌঁছায় বলে মনে করেন জ্যোতিষবিদরা।
  • শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা ও দুর্বল স্নায়ুতন্ত্রের অসুখে যারা ভুগছেন, তাঁদের জন্য পান্না ধারণা করা খুবই উপকারী।
  • যে কোনও রকম নেশায় আচ্ছন্ন মানুষ পান্না ধারণ করলে নেশা থেকে বেরিয়ে আসা শক্তি সঞ্চয় করতে পারেন।মূল্যবান রত্ন পান্নার খন্ড
  • পান্না পরলে বিবাহিত জীবন সুখের হয়, সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং সন্তান ভাগ্য প্রসারিত হয়।
  • এছাড়া পান্না ধারণ করলে মনযোগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কে উন্নতি ঘটে।
  • ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য়ও পান্না অত্যন্ত উপযোগী। বড় পরীক্ষা দেওয়ার আগে পান্না ধারণ করার পরামর্শ অনেক সময়ই জ্যোতিষবিদরা দিয়ে থাকেন।
  • যে কোনও রকম দুঃখ কষ্ট ও মানসিক যন্ত্রণা দূর করতে সাহায্য করে পান্না।
  • বেইমানি বা বিশ্বাসঘাতকতা করলে বা কেউ আপনাকে ঠকালে সেই কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসতে অনেকটাই উপকারী পান্না।
  • এই পাথর বুধ গ্রহের প্রতিনিধি হওয়ায় সাধারণত যাঁদের বুধ দুর্বল, তাঁদেরই পান্না ধারণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • ঠিকমতো পান্না ধারণ করলে কেরিয়ারের প্রতি ফোকাস বাড়ে।
  • ক্রমাগত জীবনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য পান্না উপকারী।
  • শিক্ষক, আর্কিটেক্ট, ডাক্তার, ব্যবসায়ীদের জন্য পান্না উপযোগী।
  • প্রাচীনাকালে রাজা রাজড়ারা সাপের বিষের অ্যান্টিডোজ হিসেবে পান্না ব্যবহার করতেন।
  • যাঁদের চোখের সমস্যা আছে, তাঁরাও এই সবুজ রত্ন ধারণ করলে উপকার পাবেন।

দরদাম:

যেহেতু পান্না একটি মূল্যবান রত্ন তাই এটিও বিকিনিকি চলে বাজারে। সোনা-রুপার মতো পাথরের কাট ও ক্যারাটের ওপর পান্নার এর দাম নির্ভর করে।

শেষকথা:

পান্না ধারণ করার আগে কোনও জ্যোতিষবিদের সঙ্গে পরামর্শ নেয়া ভালো। কোন সমস্যার জন্য কোন পাথর ধারণ করতে হবে তার সঠিক সিদ্ধান্ত জ্যোতিষবিদরা দিতে পারে।