যুক্তরাজ্যের সবুজ-শ্যামল মাঠে এখন নতুন এক ধরনের সুরের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। পূর্বে যেখানে শুধু পাখির কূজন আর ট্র্যাক্টরের গর্জন পরিবেশের একমাত্র অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। এখন ব্রিটেনের বহু খামারে এসব শব্দের সঙ্গে গরুর জন্য সুরও বাজানো হয়।
তবে এটি মোটেও শখ করে বাজানো হয় না। বরং নতুন এই ফ্যাশনকে গরুর আরামদায়ক রাখার পাশাপাশি দুধের মান, উৎপাদন বাড়ানোর নতুন উপায় হিসেবেও দেখা হচ্ছে। এই প্রবণতা টিকটকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ওয়ারউইকশায়ারের নুনিয়েটনে বসবাসকারী কৃষক চার্লস গোডবি এই ট্রেন্ডের অংশীদার।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় এক দশক আগে একটি রোবোটিক মিল্কিং সিস্টেম চালু করেছিলাম। সেখানে অনেক নতুন ও তীক্ষ্ণ শব্দ ছিল। আমাদের মনে হয়েছে, এগুলো গরুর জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। তাই আমরা গরুর আশপাশে ধারাবাহিক ও শান্ত সংগীতময় পরিবেশ দেওয়ার জন্য রেডিও চালু করলাম।’

তিনি আরো জানান, তখন কেউ কেউ বলেছিল গরুর ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক পছন্দ, তাই সেই সময় আমরা ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত চালু করি। এটা গরুকে একটু শারীরিকভাবে শিথিল করতে সাহায্য করেছিল।
আরো পড়ুন : পৃথিবীতে ফিরছে দৈত্যকার প্রাণী ডাইনোসোর!
গরুর জন্য মিউজিক চালানোর পেছনে বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু কারণও রয়েছে। গোডবির মতে, বিষয়টি অনেকটা পাভলভের কুকুরের পরীক্ষার মতো। যেখানে কুকুর ঘণ্টার শব্দ শুনেই খাবারের জন্য লালা ঝরাত।
একইভাবে গরুও সংগীতের সুর শুনে মানসিক ও শারীরিকভাবে দুধ দিতে প্রস্তুত হয়। সংগীত এদের হরমোন উৎপাদন শুরু করার পাশাপাশি দুধের প্রবাহ দ্রুততর করে। মিল্কিং পার্লারে সব সময় মিউজিক চালানো হয়, এটা শুধু কর্মীদের জন্য নয়, গরুর জন্যও যোগ করেন গোডবি।

তবে সব ধরনের সংগীত গরুর পছন্দ হবে না, এমনটাই মনে করেন আরেক ওয়ারউইকশায়ার কৃষক রব হ্যাডলি। তার মতে, জ্যাজ গরুকে শান্ত রাখে, তবে ওজি অসবার্নের রক সংগীত শুনলে তারা হয়তো ভয়ে পালিয়ে যাবে।
যুক্তরাজ্যের গ্রামাঞ্চলে গরুর জন্য সংগীত বাজানোর এই প্রবণতা প্রতি নিয়তই বাড়ছে। এটি গরুকে ভালো রাখার পাশাপাশি খামার শ্রমিকদের জন্যও সুখকর পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক। এই নতুন সংগীত ট্রেন্ড হয় তো দুগ্ধ খামারের ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনের একটি নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের দুগ্ধ খামারিদের এমন সংগীত বাজানোর বিষয়টি প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি