বয়স চল্লিশ। কাজ বলতে গ্রামের একমাত্র মসজিদে গিয়ে আজান দেওয়া। নিয়ম করে নামাজ পড়া। স্থলবেষ্টিত রাজ্য বিহারের নালন্দার সরবাহদি গ্রামের ৩৫০ বেশি হিন্দু বাসিন্দার একমাত্র মুসলিম জাহিদ আনসারী।
হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের মসজিদে ১৫ বছর ধরে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। তার আগে তার পিতা আব্দুল সামাদ আনসারীও এই মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৩ সালে না ফেরার দেশে চলে যান সামাদ আনসারী।

একটা সময় বিহারের এই গ্রাম ছিল হিন্দু মুসলিম উভয় জনগোষ্ঠীর বসতি। তবে ১৯৮১ সালের দাঙ্গা বিহারের এই সরবাহদি গ্রামের চিত্র পুরোপুরি বদলে দেয়। যে গ্রামে একসময় হিন্দু মুসলিম একত্রে বসবাস করত সেই গ্রামে এখন জাহিদ আনসারী একমাত্র মুসলিম পরিবার যারা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়নি।
জাহিদ আনসারী মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে মসজিদের পাশেই ফাঁকা জায়গায় বেশ কিছু শিক্ষার্ধীকে পড়ান। শুধু মসজিদ নয় তার সাথে রয়েছে কবরস্থানও। সবকিছুই ঠিক চলছিল কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন ওয়াকফ সংশোধনী আইন আজ ভাবাচ্ছে জাহিদ আনসারীকে।

এক সময় এই গ্রামে ৯০টি মুসলিম পরিবার ছিল। ৩০০ বিঘা জমির মালিক ছিল এই গ্রামে বসবাস করা মুসলিমরা। দাঙ্গার পর পর সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। অনেকে অল্প দামে জমিজমা বিক্রি করে চলে গেছেন। বাকি জমিজমা, বাড়ি-ঘর বেদখল হয়েছে। জাহিদ আনসারীর এক হিন্দু প্রতিবেশি ওই এলাকারই বাসিন্দা দিলীপ মাহতো একই কথা জানান।
তিনি বলেন, আমি কিছু মুসলিম পরিবারের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা দেখেছি। যারা বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করেছে কেউ কেউ তাদের বাড়িঘর জমি ছেড়ে চলে গেছে। এর কেউ পানির দরে জমি বেচে দিয়ে চলে গেছে। কেউ কেউ বিহারের অন্যান্য জেলায় চলে গেছে কেউ কেউ আবার পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

তাই নতুন সংশোধনী আইন তার অস্তিত্ব নাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যতদিন সে বাঁচবে মুয়াজ্জিনের কাজ করে যাবে। আনসারি ভালোভাবেই জানেন তার আজান শোনার মতো কেউ নেই। অথচ নিজের কাজে এতটুকু ফাঁকি দেন না কখনও। প্রতিদিন যথাসময়ের হাজির হন মসজিদে।
নামাজ সেরে আবার ফিরে যান খুদে শিক্ষার্থীদের পড়াতে। নিজের কাজটাকে দায়িত্ব হিসেবে মনে করেন আর তা পালন করার চেষ্টা করেন জাহিদ আনসারি। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী পর্যন্ত তিনি পাঠদান করান।
সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য ফেডারেল ও ন্যাশনাল হেরাল্ড ইন্ডিয়া