লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে ৪ কোটি ৩০ লাখ বছর আগের একটি উভচর তিমির জীবাশ্ম (ফসিল) আবিষ্কৃত হয়েছে। তিমিটির চারটি পা ও খুর রয়েছে। জীবাশ্মবিদদের ধারণা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণিটি চার মিটার লম্বা (১৩ ফুট)। এটি একই সঙ্গে পানিতে সাঁতার কাটার পাশাপাশি স্থলেও হাঁটতে পারতো।
চারটি অঙ্গ ও একটি শক্তিশালী লেজ থাকায় এই তিমিটিকে আধা-জলজ ভোঁদড় বা বিভারের সঙ্গে তুলনা করেছেন জলজ প্রাণি বিশেষজ্ঞরা। গবেষকদের ধারণা, এই ফসিল আবিষ্কার তিমির বিবর্তন ও এটি কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তার উপর বিস্তর তথ্য পাওয়া যাবে।
এই ফসিল প্রসঙ্গে রয়েল বেলজিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ন্যাচারাল সায়েন্সেসের বিজ্ঞানী ও গবেষণার সহ-লেখক ড. অলিভিয়ার ল্যাম্বার্ট বলেন,”ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে চার পায়ের তিমির জন্য এটি এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় নমুনা।”

পেরুর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল থেকে ১ কিলোমিটার (০.৬ মাইল) অভ্যন্তরে প্লেয়া মিডিয়া লুনার সামুদ্রিক পলিতে এই তিমির ফসিলটি পাওয়া গেছে।
ধারণা করা হয় যে প্রথম তিমিগুলো প্রায় ৫ কোটি বছর আগে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বিবর্তিত হয়েছিল। তবে পেরুর এই স্থানে নতুন করে চার পেয়ে তিমির ফসিল আবিষ্কার গবেষকদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে।
চার পেয়ে তিমিদের দেহ পানির জন্য আরও উপযুক্ত হয়ে ওঠার সাথে সাথে এরা দক্ষিণ এশিয়া থেখে আরও দূরে উত্তর আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকায় চলে যায়, যেখানে জীবাশ্মটি পাওয়া গেছে।

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের প্রাচীন তিমি গবেষক ট্র্যাভিস পার্ক বলেন, “তিমি হল বিবর্তনের এই প্রতীকী উদাহরণ। এরা ছোট খুরযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণি থেকে আজকের নীল তিমিতে পরিণত হয়েছিল। তারা কীভাবে ভারতীয় উপদেশ থেকে দক্ষিণ আমেরিকা সমুদ্র জয় করেছিল তা দেখা খুবই আকর্ষণীয় বিষয়।”
পেরু, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামের একটি আন্তর্জাতিক জীবাশ্মবিদ দল ২০১১ সালে জীবাশ্মটি খনন করে আবিষ্কার করেন। তারা এর নামকরণ করেছেন পেরেগোসেটাস প্যাসিফিকাস, যার অর্থ “প্রশান্ত মহাসাগরে পৌঁছে যাওয়া ভ্রমণকারী তিমি”।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যেহেতু এই তিমিরা পানির নিচে ও মাটির ওপরে থাকতে পারতে সেহেতু তাদের শরীরে অনেক শক্তি ছিল।বর্তমান সময়ের তিমিদের হাত পা নেই। তারা মাছের মতো আচরণ করে। তবে যদি এই চার পায়ের তিমিদের তথ্য প্রমাণিত হয় তাহলে সেটি হবে তিমিদের নিজে একটি বিরাট বিপ্লব।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন চার পায়ের এই তিমিরা অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ার কারণ হচ্ছে এরা জল ও স্থলে উভয় দিকেই নিজের খাদ্যগ্রহণ করতে পারতো।
ফসিলটি দেখে মনে করা হয়েছে এই তিমির দাঁতের গঠন অনেকটা কুমিরের মতোই ছিল। তবে কালের নিয়মে এরা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করে। মাটির ওপরের পরিবেশ এদের সঠিক বলে মনে হয়নি। ফলে তারা পানিকেই বেছে নিয়েছে। তারপর থেকেই এদের হাত-পা অবলুপ্ত হয়েছে।

এই তিমিদের আকার খুব একটা বেশি ছিল না। এরা ছোট হলেও যথেষ্ট ভাল শিকারী ছিল। দাঁতের গঠন দেখে তা বোঝা যায়। তবে পানিতে স্থায়ীভাবে থাকার ফলে এদের দেহ আকারে বড় হতে শুরু করে। ফলে সেখান থেকে এদের মুখের গঠনও পরিবর্তন হতে শুরু করে।
তিমিদের এই বিবর্তনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে প্রশান্ত মহাসাগর। সেখানকার পানির পরিবেশ থেকে তিমিদের জীবনের ধারা পরিবর্তন হয়েছে। আকারে বড় হয়ে তিমিরা পানির সবচেয়ে বড় প্রাণিতে পরিণত হয়েছে। তবে শিকার করার ক্ষিপ্রতা হারিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি, ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম ও ইন্ডিয়ান ডিফেন্স সার্ভিস রিভিউ