ফ্যাশনের দুনিয়ায় কিছু কিছু জিনিস আসে একেবারে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেগুলো হয়ে ওঠে ট্রেন্ড ও স্টাইল স্টেটমেন্ট। ক্রকস তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ।
একসময় শুধুই আরামদায়ক, জলরোধী, কিছুটা ‘মজার’ দেখানোর জন্য পরিচিত এই জুতা আজ বিশ্বব্যাপী এক ফ্যাশন প্রপঞ্চ (ফেনোমেনন)।
নৌকা থেকে…
২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রকসের জন্ম। ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে আমেরিকান স্কট সিম্যান্স, লিন্ডন হ্যানসন ও জর্জ বোডেকার জুনিয়র ক্যারিবীয় সাগরে নৌভ্রমণে বের হন, আর সেখানেই তারা নৌকায় ব্যবহারের জন্য এক ধরনের জুতার ধারণা পান, যা-ই ছিল ক্রকসের মূল অনুপ্রেরণা।
তিনজনের সেই দলটি হঠাৎই কানাডিয়ান কোম্পানি ‘ফোম ক্রিয়েশন’ ও তাদের উদ্ভাবিত ক্রসলাইট নামের উপাদানটির সন্ধান পায়, যা নৌকায় ব্যবহারের উপযোগী জুতার জন্য একেবারেই উপযুক্ত- জলরোধী, হালকা ও আরামদায়ক।

পরবর্তীতে একচেটিয়া উৎপাদন অধিকার অর্জন করে তারা ২০০২ সালে প্রথম ক্রকস জুতা বাজারে আনে। এর নাম ছিল ‘দ্যা বিচ’ ও ফোর্ট লডারডেল বোট শোতে প্রদর্শনের সময় ২০০ জোড়া জুতা মুহূর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। ক্রকস বোটিং ও আউটডোর কার্যক্রমে জড়িত মানুষের মধ্যে বেশ দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
জুতার নাম ‘ ক্রকস’ কেন?
২০০২ সালে যখন প্রথম এই জুতাটি তৈরি হয়, তখন এর ডিজাইন আর বৈশিষ্ট্য দেখে নির্মাতারা মনে করেন, এটা অনেকটা কুমিরের মতো। কারণ কুমির যেমন জল-স্থল দুই জায়গাতেই টিকে থাকতে পারে, এই জুতাও তেমনি সমানভাবে নৌকা, সমুদ্রতীর, কাদা বা রোদ সব জায়গায় ব্যবহার উপযোগী।
কুমির যেমন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে, তেমনি ক্রকসও অনেকদিন টিকে। জুতার সামনের গোল ও চওড়া শেপ কিছুটা কুমিরের মুখের মতো দেখতে। এই মিলগুলো দেখে এর নির্মাতারা ব্র্যান্ডের নাম দেন ‘Crocs’, যা এসেছে Crocodile শব্দ থেকে।

ফ্যাশন দুনিয়ায় প্রবেশ
প্রথমদিকে অনেকেই ক্রকসকে ‘অদ্ভুত’ বা ‘ফ্যাশনের বাইরে’ বলে মনে করতেন। কিন্তু ২০১০-এর পর ধীরে ধীরে সেলিব্রিটি, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ও ডিজাইনার ব্র্যান্ডের হাত ধরে ক্রকসের ইমেজ বদলাতে শুরু করে।
বিভিন্ন তারকা নিজেদের স্টাইল স্টেটমেন্টে ক্রকসকে যুক্ত করেন। র্যাম্প শো, ফটোশুট ও স্ট্রিট স্টাইলে ক্রকস এক নতুন ফ্যাশন সিম্বল হয়ে ওঠে।
বর্তমান অবস্থা
হালকা ওজন, সহজে পরা ও খোলা যায়, পা ঘামায় না। এই বৈশিষ্ট্যগুলো একে দৈনন্দিন জীবনের উপযোগী করেছে। ছোট ছোট ‘জিব্বিটস’ চার্ম দিয়ে ক্রকসকে ব্যক্তিগত স্টাইলে সাজানোর সুযোগ তরুণদের ভীষণ টানছে। সীমিত সংস্করণের ডিজাইনগুলো বাজারে আসা মাত্র বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

পোস্ট-প্যানডেমিক ফ্যাশন ট্রেন্ড–আরামদায়ক ও ক্যাজুয়াল পোশাকের মতো জুতার দিকেও ঝোঁক বাড়িয়েছে, যা ক্রকসকে আরো এগিয়ে দিয়েছে। এই জুতাগুলো জেন্ডার-নিউট্রাল বা লিঙ্গ নিরপেক্ষ ডিজাইনের। অর্থাৎ নারী-পুরুষ সবার জন্য উপযোগী, বয়সভেদেও কোনো বাধা নেই।
ক্রকস প্রমাণ করেছে, ফ্যাশনে ‘নিয়ম’ বলে কিছু নেই। একসময় যাকে শুধু কার্যকরী জুতা ভাবা হত, আজ সেটাই হচ্ছে পুরো লুকের মূল আকর্ষণ। সমুদ্রতীর থেকে লালগালিচা, রান্নাঘর থেকে কনসার্ট- ক্রকসের এ যাত্রা দেখিয়ে দেয়, সঠিক সময়ে সঠিক প্রেজেন্টেশন পেলে যেকোনো কিছুই হতে পারে আইকনিক ফ্যাশন আইটেম।
সূত্র : দ্যা স্টাইল হিস্টোরিয়ান