আজ থেকে ৮০ বছর আগে ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট। জাপানের নাগাসাকিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্ষেপ করা পারমাণবিক বোমায় মুহূর্তেই ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সেই বিভীষিকাময় দিনের সাক্ষী সুমিতেরু তানিগুচি।
৮ দশক আগে ভাগ্যগুণে বেঁচে যান তানিগুচি। তার শরীরের দগ্ধ চিহ্ন যেন পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতার অকাট্য প্রমাণ দিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ২০১৫ সালে প্রকাশিত ইউজিন হোশিকোর তোলা সেই হৃদয়স্পর্শী ছবিগুলো আবারো প্রকাশ করেছে নাগাসাকি হামলার ৮০তম বার্ষিকীতে।
ছবিগুলোতে দেখা যায় তানিগুচির পিঠ ও হাতে পোড়া দাগ, যেগুলো তিনি লুকোতে চাননি। তার ভাষায়, এগুলো ছিল সতর্কবার্তা, যেন বিশ্ব ভুলে না যায় পারমাণবিক অস্ত্রের ধ্বংসযজ্ঞ।

কিশোর বয়সে তানিগুচি ভেবেছেন মৃত্যুর কথা
১৯৪৫ সালের সেই দিনে তানিগুচির বয়স মাত্র ১৬। ডাকপিয়নের কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ বিস্ফোরণের তীব্র ধাক্কায় তিনি ছিটকে পড়েন। কেন্দ্রবিন্দু থেকে প্রায় ১.৮ কিলোমিটার দূরে থাকলেও তার পিঠ ও শরীরের বড় অংশ মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়।
টানা ২১ মাস তিনি হাসপাতালে পেটের ওপর শুয়ে কাটান, চিকিৎসকরা তখন তার পঁচন ধরা মাংস ও হাড় সামলানোর চেষ্টা করছিলেন। কিশোর বয়সেই তীব্র ব্যথায় তিনি বহুবার ভেবেছিলেন, ‘আমাকে মেরে ফেল।’
দীর্ঘ সময় এক ভঙ্গিতে শুয়ে থাকার কারণে তার বাম হাত আর কখনো সোজা হয়নি। শ্বাস নিতে এখনো কষ্ট হয়, পিঠের ক্ষতস্থানে প্রতিদিনই স্ত্রীকে মলম লাগাতে হত। তবুও তিনি সারা জীবন এই দাগগুলোই মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন সত্য সাক্ষ্য হিসেবে।

শান্তির জন্য আজীবন লড়াই
তানিগুচি ছিলেন নিহোন হিদানকিও নামের পারমাণবিক হামলা–বেঁচে ফেরা সংগঠনের সহসভাপতি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে সোচ্চার। ২০২৪ সালে যখন সংগঠনটি নোবেল শান্তি পুরস্কার পায়, তখন অনেকেই স্মরণ করেন তানিগুচির শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠ আর তার অমোচনীয় দাগ।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই এটা যেন শেষ হয়। আর কোনো মানুষ যেন পারমাণবিক অস্ত্রের যন্ত্রণা না ভোগ করে।’
২০১৭ সালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নাগাসাকির বাসিন্দা সুমিতেরু তানিগুচি। মৃত্যুবরণ করলেও তার দেহের ক্ষতচিহ্ন আর অনড় শান্তির আহ্বান আজো বিশ্ববাসীর মনে অমোচনীয় দাগ কেটে গেছে।
সূত্র : এপি