সাদিয়া জাহান হুমায়রা: বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ব্যবহার্য উপাদান হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। অতীতে এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর ব্যবহার ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও বর্তমান সময়ে এর ব্যবহার কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্যেকের পকেটে ও ব্যাগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকতে দেখা যাচ্ছে। নামিদামি কোম্পানির ব্র্যান্ডের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পাশাপাশি নামহীন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের স্যানিটাইজার নিজের সাথে রাখছেন কেউ কেউ।
সাধারণত হাতের জীবাণু ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হ্যান্ড স্যানিটাইজার একটি তরল বা জেল। যেখানে পানি নেই সেখানে স্যানিটাইজার বিকল্পহীন।
অ্যালকোহল ভিত্তিক এই স্যানিটাইজার এর সাধারণত আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ইথানল (ইথাইল অ্যালকোহল) বা এন প্রোপানলের কিছু সংমিশ্রণ থাকে।
১৯৬৬ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বেকাসরফিল্ড শহরের বাসিন্দা লুপি হার্নান্দেজ নামের নার্সিংয়ের এক ছাত্রী হ্যান্ড স্যানিটাইজার আবিষ্কার করেন।
লুপি প্রত্যক্ষ করেন যে অ্যালকোহল বা স্পিড এর সঙ্গে জেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করলে যে তরলের সৃষ্টি হয় তা দিয়ে অতি সহজেই জীবাণু নাশ করা যায়।
পাশাপাশি তা কাজ করে সাবানের মতই। এখান থেকেই পথ চলা শুরু এই তরলটির।
ক্রমে এর প্রচলন শুরু হয় মার্কিন সেনা বিভাগে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে জনসাধারণের মধ্যে ২০০৯ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (H1N1) মহামারীর সময় এর ব্যবহার দ্রুত হারে বৃদ্ধ পায়।
২০২০ সালের শুরু দিকে নভেল করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সাবানের পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর ব্যবহার বিশ্বজুড়ে বেড়ে যায়।
করোনার বদৌলতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেই নার্সিংয়ের ছাত্রী লুপি হার্নান্দেজের কাছে কৃতজ্ঞতা নতজানু জীবাণু তটস্থ একুশ শতকের আধুনিক বিশ্ব।
বহুবিধ ব্যবহার:
করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে সুরক্ষিত থাকতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এখন নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে এটি যেমন কার্যকর, তেমনি গৃহস্থালির বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও পরিচ্ছন্নতায়ও এর রয়েছে সফল ব্যবহার।
- সিলভারে মরিচা ধরলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করে পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
- চশমা থেকে স্ক্র্যাচ বা আঙুলের ছাপ মুছতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে আলতো করে মুছুন।
- ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘামে দুর্গন্ধ হয়। বগলে সামান্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার লাগান। দূর হবে ঘামের দুর্গন্ধ।
- ইস্ত্রি বা হেয়ার স্ট্রেইটনার কালচে হয়ে গেলে ঠাণ্ডা হওয়ার পর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সাহায্যে মুছে নিন।
- আয়নায় হেয়ার স্প্রের দাগ লাগলে পরিষ্কার করতে ব্যবহার করুন হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
- মেকআপ ব্রাশ পরিষ্কার করতেও নিশ্চিন্তে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
- হোয়াইট বোর্ড বা পোশাকে পার্মানেন্ট মার্কারের দাগ লেগেছে? ব্যবহার করুন হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
- বয়াম, আসবাব কিংবা নতুন ব্যাগ থেকে থেকে আঠালো স্টিকার ওঠাতে পারছেন না? সাহায্য নিন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের।
- কি-বোর্ড পরিষ্কার করতে নরম কাপড় ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- গ্যাজেটের টাচস্ক্রিন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে কাজে লাগাতে পারেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
- হীরার আংটি পরিষ্কার করুন হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে।
আগুন থেকে সাবধান:
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে আগুন থেকে সাবধান থাকতে হবে। বিশেষ করে রান্নাঘরে কাজের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা অনিরাপদ।
করেনার সংক্রমণ ঠেকাতে নিশ্চয়ই সবাই হাত পরিষ্কার রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। হাত পরিষ্কার রাখতে সবচাইতে কার্যকর উপায় সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া। আর সেটা হাতের কাছে না থাকলেই কেবল ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ কিংবা ‘হ্যান্ড রাব’ ব্যবহার করতে হবে।
রান্নাঘরে চাই বাড়তি সাবধানতা। কারণ একবেলার খাবারের মাধ্যমেই নিমেষেই পুরো পরিবারে শরীরে পৌঁছে যেতে পারে মারাত্মক এই ভাইরাস।
করোনা ধ্বংসে করতে হলে অবশ্যই ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি অ্যালকোহল থাকতে হবে ব্যবহৃত ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ কিংবা ‘হ্যান্ড রাব’য়ে। অ্যালকোহল তীব্র দাহ্য পদার্থ, তাই রান্নাঘরে জলন্ত চুলার আশপাশে তা ব্যবহার করা স্বভাবতেই বিপদজনক।
অধিকাংশ ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’য়ে থাকে ৬২ শতাংশ ইথাইল অ্যালকোহল, যা আগুনের আশপাশে যথেষ্ট বিপদজনক একটি দ্রবণ। তাই আগুনের আশপাশে তা ব্যবহার কিংবা সংরক্ষণ করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
রান্নাঘরে অ্যালকোহলযুক্ত ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ঘটনা যে কারও ঘটে যেতে পারে।
রান্নাঘর ও আগুন আছে এমন সকল স্থান থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে সকল প্রকার ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ ও ‘হ্যান্ড রাব’। নিরাপদ বোতলে তা সংগ্রহ করাও জরুরি।
ব্যবহারের সময় আগুনের কাছ থেকে অবশ্যই সরে আসতে হবে। স্প্রে-জাতীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিশেষ বিপজ্জনক।
আর বাসায় রান্না করার সময় নিশ্চয়ই হাতের নাগালে সাবান ও পানি থাকবে। তাই এখানে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ ব্যবহার না করাই হবে বু্দ্ধিমানের কাজ। কারণ এদের অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।