উম্মে সায়মা: সামুদ্রিক মাছের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়়় মাছ হচ্ছেে না টুনা মাছ। সমুদ্রে সৈকতে চলাচল করেন এমন মানুষ নেই যে টুনা মাছের স্বাদ সম্পর্কেেে জানেন না।বিশ্বের বৃহত্তম টুনা মাছের মার্কেট জাপানে অবস্থিত। দেশটির রাজধানী টোকিওর টয়োসু মাছের বাজারটি টুনা মাছ সরবরাহের জন্য জগত বিখ্যাত।
করোনা মহামারীর কারণে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বহুমুখী চাপে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই টুনা মার্কেটটি।
করোনা সংক্রমণ ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কারণে রেস্তোঁরা ও পাইকারদের আনাগোনা নেই টুনা মার্কেটে।
অন্যান্য প্রদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টুনা মাছের বাজারগুলোও চাপের মুখে থাকায় টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে।
জাপানে মে মাসের শেষের দিকে জরুরি অবস্থা শিথিলের পরে ব্যবসায়ীরা আরও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের তৎপরতার আশা করেছিলেন, তবে সভা, সমাবেশ ও বিয়ের মতো অনুষ্ঠান ক্ষুদ্র পরিসরে হওয়ায় বড়সড় ভোজের আয়োজন নেই।
বড় ইভেন্টগুলোর ওপর আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও সাবধানতা অবলম্বন করছেন দেশের নাগরিকরা। যদিও অনেক জাপানি এখনও রেস্তোঁরায় যায় বেশ সতর্কতার সাথে। তবে জরুরী অবস্থার পরে তা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
ধস নেমেছে ব্লুফিন টুনার:
জাপানের বড় বড় ইভেন্টগুলোতে তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষত জাপানে “সুশির কিং” নামে পরিচিত ব্লু ফিন টুনার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন চাহিদা ব্যাপক ধস নেমেছে।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই মাসে টুনার দাম ৮.৪% কমেছে। যা সারা বছরের তাজা মাছের দামের প্রায় ১.৫ % এর বেশি। জাপানের বিভিন্ন প্রদেশের বাজার থেকেই সিংহভাগ টুনা মাছ রফতানি করা হয় গোটা বিশ্বে।
গত আগস্টের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে বিক্রি ৬০ % কমেছে বলে টোকিওর কান্দা অঞ্চলের টুনা মাছ ব্যবসায়ী ইলাকায়া ডাইনিং বারের মালিক ইয়াসুয়ুকি শিমাহারা জানিয়েছেন।
অনলাইনে হিমশীতল টুনা মাছ:
এক বছর আগে নতুন রেস্তোঁরা খোলেন শিমাহারা। তার রেস্তোঁরায় গ্রাহক সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জুলাই মাসে অনলাইনে হিমশীতল টুনার বাক্স বিক্রি শুরু করেন শিমাহারা।
তিনি এ পর্যন্ত ৫, ৫০০ ইয়েন করে প্রায় ২০০ বাক্সের অর্ডার পেয়েছেন। বাক্সের ভেতরে দুইটি আকামি লাল টুনা মাছের মাংস থাকে।
সেপ্টেম্বরের পরে আরও ব্যয় বহুল চাতোরো মাঝারি ফ্যাটি টুনা মাছ যার দাম প্রতি বাক্স ৮,৫০০ ইয়েন করে বিক্রি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে শিমাহারার।
বিশ্বের বৃহত্তম টুনা মাছের বাজার টয়োসুর পাইকার কিমিও আমানো বলেছেন, করোনাকালে পরিবারের মধ্যে টুনা মাছ বিক্রি বেড়েছে তবে গেল কয়েক মাসে ব্যবসায় যে ক্ষতি হয়েছে তার তুলনায় এই বিক্রির পরিমাণ খুবই কম।
জাপানে জরুরী অবস্থা শিথিলের পরে আমানোর মাছের জন্য রেস্তোঁরার মালিকদের চাহিদা বেড়ে সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়।
রাজধানী টোকিওর গিনজা অঞ্চলের মতো অভিজাত এলাকার রেস্তোঁরা, বার, বড় হোটেলও বিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে চালু না হওয়ায় টুনা মাছের বিকিনিকি বাড়েনি।
যা বলছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা:
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৯ সালে জাপানের টুনা রফতানি ১০ % বেড়েছে। ২০২০ সালের অলিম্পিকের মতো বড় ইভেন্টকে সামনে রেখে ব্লুফিন টুনা মাছ বিক্রি ১৩% বেড়েছিল তবে করোনার কারণে পরে তা হ্রাস পায়।
২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী টুনা মাছের আমদানি হয় ১৫.৭ বিলিয়ন ডলার। জাপান ওই বছর বৃহত্তম টুনা মাছের আমদানিকারক ছিল। তবে করোনা মহামারী এ শিল্পকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।
জাপানের টুনা মাছ আমদানি এক বছর আগের তুলনায় ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে ১৮% হ্রাস পেয়েছে বলে জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ না কমায় মানুষজন এখনও বাইরে যাওয়া ও খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকায় শীঘ্রই টুনা মাছের বিক্রি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যসূত্র: জাপান টুডে