বর্তমান সময়ের গৃহসজ্জার জনপ্রিয় একটি অনুষঙ্গ হচ্ছে কাঠের ফ্লাশ ডোর। দামে সাশ্রয়ী ও বেশি দিন টেকে বলে দেশ বিদেশে ব্যাপকভাবে ফ্লাশ ডোর ব্যবহৃত হচ্ছে আজকাল।
রকমফের:
কাঠের ফ্লাশ ডোর মূলত দুই ধরনের হয়। এই দুই ধরনের মধ্যে একটি হচ্ছে প্লেইন ফ্লাশ ডোর আরেকটি হচ্ছে ডিজাইন ফ্লাশ ডোর।
প্লেইন ফ্লাশ ডোর:
কাঠের প্লেন ফ্লাশ ডোর সাধারণত গর্জন ফাইবার, ক্রাউনটিক ফাইবার, বার্মাটিক ফাইবারের হয়। প্লেন ফ্লাশ ডোরের ওপরে ২-৩ ইঞ্চি পরিমাণের লিপিং ও বিনিয়ার থাকে। লিপিং সাধারণ আম কাঠের হয় অথবা মেহগনি কাঠের হয়। অন্য যে কোনো কাঠেরই লিপিং লাগানো যায়। প্লেন ফ্লাশ ডোরের ভেতরে কোনো ফাপা নেই। পুরোটাই কেরোসিন কাঠ দিয়ে আটকানো থাকে।
দরদাম:
কাঠের প্লেন ফ্লাশ ডোরের মধ্যে সব কোম্পানিরই সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হয় গর্জনের কাঠেরটা। গর্জনের প্লেন ফ্লাশ ডোর প্রতি স্কয়ার ফুট ১১০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ক্রাউন্টিক ফাইবারের ফ্লাশ ডোর প্রতি স্কয়ার ফুট ১৭০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সবচেয়ে ভালো প্রিন্টার এর মধ্যে হচ্ছে বার্মাটিক ফাইবারেরটা। বার্মাটিক ফাইবারের ফ্লাশ ডোর ২২০ টাকা থেকে শুরু করে ২৬০ প্রতি স্কয়ার ফুট বিক্রি হয়।
প্লেন ফ্লাশ ডোরের বৈশিষ্ট:
- ফ্লাশ ডোরের মধ্যে কোন ফাপা থাকে না।
- ভেতরে কেরোসিন কাঠ দিয়ে ভরাট করা থাকে।
- এই ডোরে কোনো ধরনের ডিজাইন বা নকশা করা থাকে না।
- ওপরে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লিপিং থাকে।
পলিশ ও বার্নিশ:
কাঠের প্লেন ফ্লাশ ডোরে পলিশ বা বার্নিশ করতে হয়। এটা কোন পলিশ বা বার্নিশ করা থাকে না। পলিশ ও বার্নিশ ছাড়াই এইটা বিক্রি হয়।
ডিজাইন ফ্লাশ ডোর:
প্লেন ফ্লাশ ডোর আর ডিজাইন ফ্লাশ ডোরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ডিজাইন ফ্লাশ ডোরের দাম প্লেন ফ্লাশ ডোরের চেয়ে অনেকটা বেশি।
দরদাম:
বিভিন্ন কোম্পানির ডিজাইন করা বাহারি ফ্লাশ ডোর রয়েছে বাজারে। কাঠের ডিজাইন ফ্লাশ ডোরও গর্জন ফাইবার, ক্রাউনটিক ফাইবার ও বার্মাটিক ফাইবারের হয়। সাধারণত উচ্চতা ৮১ ইঞ্চি বা ৭ ফুট ফিক্সড করা থাকে। তবে কেউ চাইলে আরো বড় বা ছোট করতে পারে। তবে প্রস্থ’র ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকে।
জিডাইন ফ্লাশ ডোরের দৈর্ঘ্য ৮১ ইঞ্চি বা ৭ ফুট থাকলেও পাশে ২৭ ইঞ্চি, ৩৩ ইঞ্চি, ৩৭ ইঞ্চি ও ৩৯ ইঞ্চি পরিমাণ ডোর লাগানো যায়। ২৭-৩৯ ইঞ্চির ডিজাইন ফ্লাশ ডোর ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা থেকে শুরু হয়ে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে চারপাশে বা উপরে বিশেষ ধরনের কাঠ বা পলিশ দিলে আরো ১৫০০-২০০০ টাকা বেশি খরচ হবে।
ফ্লাশ ডোরের ভেতরের কাঠগুলো সিজন ও টিটমেন্ট করা। বাইরের দুই পাশেই সম্পূর্ণ ডিজাইন করা থাকে। পলিশ ও বার্নিশ করা থাকে বিধায় আলাদা করে পলিশ বা বার্নিশের প্রয়োজন নেই। ফ্লাশ ডোরের ওপরের লিপিংগুলো সাধারণত মেহেগনি কাঠের হয়। তবে অর্ডার করে যে কোনো কাঠের লিপিং লাগানো যায়।
পলিশ বা বার্নিশ:
ডিজাইন ফ্লাশ ডোরের ক্ষেত্রে পলিশ বা বার্নিশের কোনো প্রয়োজন হয় না কারণ হচ্ছে ডিজাইন ফ্লাশ ডোর পলিশ ও বার্নিশ করাই থাকে।
কাঠের ডিজাইন ফ্লাশ ডোরের বৈশিষ্ট্য:
- ঝামেলা মুক্তভাবে স্থাপন করা যায়।
- এটি দীর্ঘস্থায়ী ২০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
- সিজনিং করা যার ফলে বাকা/ফাঁকা হয় না।
- কাঠগুলো কেমিকেল ট্রিটমেন্ট করা যার ফলে ঘুন ও পোকা ধরে না।
- নিজের মতো শৈল্পিক কারুকার্য করা যায়।
পছন্দ ও অপছন্দ:
কম দাম বলে অনেকের কাঠের ফ্লাশ ডোর পছন্দ আবার অনেকেই অপছন্দ করে থাকেন। কারণ হচ্ছে এটি পানি লাগলে সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। পানি লাগলে ওপরে বিনিয়ারটি দ্রুত উঠে যায়। তখন এটি খারাপ দেখা যাবে।
অপছন্দের আরেকটি কারণ হচ্ছে ফ্লাশ ডোর বারান্দায় ব্যবহার করা যায় না। ফ্লাশ ডোর রুমের দরজা হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। এটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় তবে পানি থেকে অবশ্যই দূরে রাখতে হবে। তবে বিশেষ ধরনের ডিজাইন ফ্লাশ ডোরও আজকাল তৈরি হচ্ছে যেগেুলো টয়লেট ও বারান্দায়ও ব্যবহার করা যায়।
ফ্লাশ ডোরের বহুবিদ ব্যবহার:
- শুধুমাত্র বিল্ডিং এর অভ্যন্তরে এর ব্যবহার করতে হবে।
- বাইরের দিকে যেখানে রোদ বা বৃষ্টি হয় সেখানে ব্যবহার করা যাবে না।
- বাথরুমের দরজা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
- ডিজাইন এবং উপাদানের খুব বেশি পরিবর্তন করা যায় না।
- সাধারণত ঢালাও তল ব্যবহার করা হয়।
- বাসা-বাড়িতে
- হোটেল
- রেস্তোঁরায়
- হাসপাতাল
- যদিও বর্তমানে বিশেষ ধরণের পলিশ বা অন্য ফিনিশিং দিয়ে টয়লেটে ও বারান্দায় ব্যবহার করা যায়
প্রস্তুতকারক কোম্পানি:
দেশের অনেক কোম্পানি ফ্লাশ ডোর তৈরি করে থাকে তাদের মধ্যে ব্রান্ডের কিছু কোম্পানি যেমন-
- আরএফএল
- পারটেক্স
- আকিজ
- সুপার বোর্ড
- এন মোহাম্মাদ
- লীরা
- গাজী
- স্বপন
- মোস্তফা
- বেঙ্গল
- আলীবাবা ফ্লাশ ডোর তৈরি করে।
এর পাশাপাশি স্থানীয় অনেক কোম্পানি ফ্লাশ ডোর তৈরি করছে। সবগুলো কোম্পানিরই দাম কাছাকাছি। অস্থায়ী অনেকে আজকাল ফ্লাশ ডোর তৈরি করে।
ফ্লাশ ডোরের কাচাঁমাল:
কাঠের ফ্রেমের উপরে এমডিএফ অথবা আর্টিফিশিয়াল কাঠ অথবা এ ধরণের বোর্ড দিয়ে মোড়ানো হয়। দুই দিকেই এই বোর্ড দিয়ে মোড়ানো হয়। ভেতরের ফাকা অংশ সাধারণত বিভিন্ন কাঠের গুড়া বা বোর্ড দিয়ে ভরাট করা হয়। উপরে টিক প্লাই দিয়ে ফিনিশিং দেয়া হয়।
ফ্লাশ ডোর লাগানোর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
- হ্যান্ডেল
- ডোর ভিউয়ার
- ডোর ক্লোজার
- ডোর বেল
- ফ্রেম
- ডোর স্টোপার
- হিঞ্জ এবং স্ক্রু
- টাওয়ার বোল্ট
- তালা
- স্লাইডিং বোল্ট
খুব সহজেই এই ডোর লাগানো যায়। এর জন্য উপরের জিনিসগুলোর ব্যবহার করা হয় তবে বাধ্যতামুলক নয়।
কাঠের ফ্লাশ ডোর এর রক্ষণাবেক্ষণ:
যেহেতু এই ডোরের মসৃন তল থাকে। এতে তেমন কোন ময়লা জমা হয় না। পলিশ বা রং থাকার কারণে এই দরজা নষ্টও হয় কম। তবে যেই বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরী তা হলো শুকনা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। পানি থেকে একে নিরাপদে রাখতে হবে। পানি এই দরজার বড় শত্রু।
সুবিধা:
- খরচ কম ও নকশা সাদা-মাটা
- দেখতে সুন্দর লাগে।
- অনেকদিন টেকসই, সহজে বাকা হয় না।
- কিছুদিন পরপর ফিনিশিং করার ঝামেলা নাই।
- ডিজাইন করার জন্য কাটাকাটি সহজ।
- সহজে স্ক্র্যাচ পড়ে না।
- সহজে পরিস্কার করা যায়
কাঠের ফ্লাশ ডোর এর পুরুত্ব কত ?
ফ্লাশ ডোর এর পুরুত্ব সাধারণত ৩৫ মিলিমিটার বা ১.৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। তবে অর্ডার দিলে অন্য সাইজেও পাওয়া যায়। নিজের পছন্দ মতোও করে নেয়া যায়।
অসুবিধা:
- পানিতে ক্ষতি হয়।
- খুব বেশি ডিজাইন করা যায় না ।
- কারখানাতে তৈরি হয় বলে মাপ দেয়ার সময় সতর্কতার সাথে দিতে হবে।
কিভাবে লাগাতে হয়:
এর লাগানোর পদ্ধতি সাধারণ দরজার মতই। ফ্রেম এর সাথে হিঞ্জ দিয়ে লাগানে হয়। তবে গ্লাস ডোর এর ক্লোজার ব্যবহার করেও লাগানো যায়।
ফিনিশিং:
সাধারণত বার্নিশ বা ক্লিয়ার কোটিং রং করা হয় এই দরজাতে। সেই ক্ষত্রে টিক ভিনিয়ার বা প্লাই ব্যবহার করতে হবে।
ময়লা প্রতিরোধক:
সাধরণত ময়লা ধরে না কারণ এই সাটার প্লেইন হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে বিভিন্ন ডিজাইনে তৈরি হওয়াতে ময়লা ধরার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে শুকনো কাপড় দিয়ে খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়।
আবহাওয়ার প্রভাব:
আবহাওয়ার কারণে দৈর্ঘ্য প্রসারণ হয় না। যার কারণে গরমে সাইজ বড় হওয়া বা শীতে ছোট হয় না। সব ঋতুতেই এ ডোর ব্যবহার উপযোগী।
ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় সময়:
যেহেতু এটি মার্কেটে সরবরাহ অনেক। তাই যখন প্রয়োজন তখনই এটি এনে ব্যবহার করা যায়। এর জন্য কোন অতিরিক্ত সময় লাগে না। তবে যদি ব্যতিক্রমী সাইজের দরজা হয় তাহলে অর্ডার দিতে হয় এবং এর জন্য ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে।
লেখক: মোহাম্মদ রবিউল্লাহ, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অনুবাদক