বরফাবৃত দক্ষিণ মহাসাগর জীব বৈচিত্র

সৃষ্টির শুরু থেকেই পৃথিবীটা একদিকে যেমন রহস্যময় অন্যদিকে অপরুপ সৌন্দর্য্যে ঘেরা। পৃথিবীর তেমন এক বিস্ময়কর ও বৈচিত্রপূর্ণ নাম দক্ষিণ মহাসাগর।

আয়তনের দিক থেকে এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাসাগর। এই মহাসাগরকে অ্যান্টার্কটিক ও অস্ট্রাল মহাসাগরও বলা হয়। এর অন্য নাম কুমেরু মহাসাগর।

এই মহাসাগরের মোট আয়তন ২ কোটি ৩ লাখ ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ, দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ, সাউথ আর্কনি দ্বীপপুঞ্জ ও স্কটিয়া আর্ক এই মহাসাগরের উন্মুক্ত অংশ।

দক্ষিণ মহাসাগর এ পেঙ্গুইনদের বিতরণ

এই মহাসাগরের সর্বোচ্চ গভীরতা ৫ হজার ৭৪৫ মিটার। এর গড় গভীরতা ১৪৯ মিটার। এই মহাসাগরের গভীরতম স্থান হচ্ছে দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ।

দক্ষিণ মেরুর নিকটস্থ এন্টার্কটিকা মহাদেশের চতুর্দিকে এই মহাসাগরটির অবস্থান। দক্ষিণ মহাসাগর পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষিণের জলরাশি, যার বিস্তৃতি অ্যান্টার্কটিকা উপকূল থেকে ৬০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূল, তাসমানিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ উপকূল এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কেপ লিউইন ভারত ও দক্ষিণ মহাসাগরের মিলনস্থল।

পোলার বিয়ার এর বসবাস দক্ষিণ মহাসাগর এ বেশি দেখা যায়

ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় তিন কোটি বছর আগে অ্যান্টার্কটিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা একে অন্য থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার ফলে এ মহাসাগরটির জন্ম।

অ্যামুন্ডসেন সাগর, বেলিংশসেন সাগর, কমনওয়েলথ সাগর, ডেভিস সাগর, কসমোনটস সাগর, ডি উরভিলে সাগর, ওয়েডেল ও লাজারেভ সাগর দক্ষিণ মহাসাগরের উল্লেখযোগ্য সাগর। অ্যামুন্ডসেন সাগরের বেশির ভাগ অংশই সারা বছর বরফাবৃত থাকে।

ওয়েডেল ও লাজারেভ সাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি সাগরের নাম রাজা সপ্তম হাকুন সাগর। নরওয়ের প্রথম রাজার নামানুসারে এ সাগরটির নামকরণ করা হয়।

দক্ষিণ মহাসাগর এ তিমির জল খেলা

দক্ষিণ মহাসাগরের অন্য সাগরগুলোর মধ্যে রয়েছে- মওসন সাগর, রিসার-লার্সেন সাগর, রোস সাগর, স্কটিয়া সাগর ও সমোভ সাগর। ম্যাকমুরডো ও পামার এই মহাসাগরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর।

এই মহাসাগরের জলরাশির অধিকাংশই বরফে ঢাকা সত্বেও বিভিন্ন দেশ প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন করতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এই মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেছে।

আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, চিলি, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে এবং যুক্তরাজ্য এই মহাসাগরের বিভিন্ন অংশের উপর নিজেদের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব দাবি করে আসছে।

এ মহাসাগরের অন্যতম চিংড়ি সাদূশ সামুদ্রিক ক্রিল মাছ

দক্ষিণ অর্কনি দ্বীপপুঞ্জ আর্জেন্টিনা এবং যুক্তরাজ্যের দাবিকৃত এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা, চিলি ও যুক্তরাজ্যের দাবিকৃত অঞ্চল দক্ষিণ শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ।

পেঙ্গুইন, তিমি, ভালুক, সীল, স্কুইড, অ্যান্টার্কটিক ক্রিল এবং বিভিন্ন ধরণের মাছ এই মহাসাগরে প্রাণীজগতের অন্যতম। হিমশীতল পাখি পেঙ্গুইন ও ভালুক এই অঞ্চলজুড়ে জীববৈচিত্রের মধ্যে অন্যতম। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে তেল ও গ্যাসও রয়েছে।

এই সমুদ্রের তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রি ও মাইনাস ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। এই মহাসাগরে অন্য মহাসাগরের মতো তীব্র বাতাস বা তরঙ্গ নেই। শীতকালে এই মহাসাগর হিমশীতল হয়।

শীতকাল তখন অ্যান্টার্কটিকার উপকূলের পানির কিছু অঞ্চল বাদে পুরোপুরি জমে যায়। অ্যান্টার্কটিকার উত্তরের দিকে যাওয়ার সাথে সাথে পানিতে থাকা লবণাক্ততা কম থাকে।